যশোর প্রতিনিধি ::

ফুল কেন্দ্রিক কৃষি অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা গদখালী। ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার এই ফুল মোকামে এখন সিজনে শত শত কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। কিছু উদ্যোগ গ্রহন করা হলে এখানে হাজার কোটি টাকার ফুল মোকাম গড়া সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি উদ্যোক্তারা। 

যশোর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৯০ টি গ্রামের প্রায় ৮ হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা হয় ফুল। আগে যেখানে সিজনে দুই পাঁচ কোটি টাকার ফুল মোকাম ছিল এখন তা শত শত কোটির ফুল মোকাম। অর্থনীতির এই পরিধি আরেরা বাড়তে পারে বলে কৃষি পন্ডিতরা মনে করেন। পাইকরি ফুল বিক্রির সাথে সাথে খুচরা নাগরিক ফুল বিক্রি এখন গদখালীর চাষীদের নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহন করতে শিখিয়েছে।

ফুলের সাথে কৃষকের পাশাপাশি ভ্যান, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রো চালকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। একই সাথে চাপান সিগারেট দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে কিছু মানুষের। প্রতি সিজনে এখানে প্রায় পাঁচশত কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। প্রতি মৌসুমে এখানে অর্থনীতির আওতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আসছে বসন্ত তাই এখানে এখন বেজায় ভীড়। সাত সকাল থেকে মানুষের ভীড় বাড়ছে। ছোট বড় মানুষ, শিশু, প্রবীণরাও গদখালিতে যাতায়াত করছেন। বাঙালী সংস্কৃতি কতটা রংবহুল তা এখন গদখালী গেলেই প্রমান পাওয়া সম্ভব।

গদখালীর প্রাণপুরুষ প্রথম ফুল চাষী শের আলী। বয়সে প্রবীণ হলেও মনে এখনো তিনি যুবক। মানুষ শের আলীকে গদখালীর ফুলেল প্রবাদ পুরুষ এবং ফুল খান বলে ডাকেন।

স্থানীয় ফুল চাষীরা বলেন, কিছু উদ্যোগ নেওয়া গেলে গদখালী হয়ে উঠবে বিশ্ব ফুল উৎপাদনের নতুন ক্ষেত্র। এজন্য কয়েকটি স্পটে ফুল শেড বা হিমাগার নির্মাণ করতে হবে। তা কৃষকের জন্য সহজলভ্য করতে হবে।

গ্রাম গুলোর রাস্তার দুইপাশে বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের বাগান দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকতে হয়।

এছাড়া ফুলের সুঘ্রাণ, মৌমাছির গুঞ্জন, আর রঙিন প্রজাপতির ডানায় ভর করে এখানে আসে চিরন্তন সুন্দরের বার্তা।

দেশের ফুলের চাহিদার ৭০ শতাংশ আসে গদখালী থেকেই। যেদিকে তাকাবেন শুধুই ফুল। গদখালী বাজার থেকে সকালেই ভ্যানে চড়ে চলে যাবেন ফুলের রাজ্যে। ভ্যান যতো সামনে এগোবে, চারপাশের জায়গাগুলো সবুজের পরিবর্তে লাল, নীল, হলুদ কিংবা সাদা হয়ে উঠবে! চোখ আটকাবে দুই ধারে। দেখলেই মনে হবে, হরেক রকমের রঙিন চাদর বিছিয়ে রেখেছে দিগন্তজুড়ে। ফুলের মানুষগুলাকে দেখেও বেশ লাগছিল। কেউ ফুল কাটছে, কেউ নিড়ানি দিচ্ছে; আবার অনেকে ভ্যান-সাইকেলে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ফুলই একসময় যাবে আপনার প্রিয় মানুষের হাতে!

ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠের চিত্রই এমন।

শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ। মনে হবে সুন্দর বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো ফুলেল স্বর্গ।

ফুলের তীব্র সুগন্ধ, অসংখ্য মৌমাছি-প্রজাপতিদের উড়ে যাওয়া দৃশ্য মন কেড়ে নিবে। এখানকার ফুল চাষিদের মনটা ফুলের মতোই সুন্দর। যে কোনো বাগানে ঢুকে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ান, ছবি তুলুন, পছন্দমতো কয়েকটা ফুল তুলুন; কেউ কিছু বলবে না। বরং আপনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিবে। তবে ফুলের বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই চাষিদের অনুমতি নিবেন।

শীতের সকালে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে গ্রামের রাস্তায় হাঁটাও একটা আনন্দময় ব্যাপার। সেই সময়ে খেজুরের রস খোঁজে।

গদখালী যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি মাস। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। যশোর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে চলে যান লোকাল বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন গদখালী যাবার বাস। গদখালী নেমে ক্ষেত দেখার জন্য ভ্যান নিয়ে নিতে পারেন। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়বে ফুলের ক্ষেত। বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশেই সকালে বসে দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের পাইকারি বাজার।

থাকার জন্য যশোর শহরকে বেছে নিতে হবে। সেখানে থাকা এবং খাবারের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন। আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল ওরিয়ন, জাবির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সিটি প্লাজা, হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ম্যাগপাই উল্লেখযোগ্য।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here