অনৈতিক কাজে গ্রেফতার হওয়া চিত্রনায়িকা কেয়া মাত্র ৫শ টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছেন।

শুক্রবার কেয়াসহ গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা মহানগর হাকিম কামরুন্নাহার রুমির আদলতে হাজির করা হলে তাদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করে মুক্তি দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার গুলশানের নিকেতনের একটি বাড়ি থেকে কেয়াকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।

গত ১৯ ডিসেম্বর সোমবার রাত ৩টায় কক্সবাজারের কলাতলীর পার্শ্ববর্তী চেইন্ডা এলাকার ইন্টারন্যাশানাল এমিউজমেন্ট ক্লাব থেকে নায়িকা সিলভিয়া আজমী চাঁদনীকে ইয়াবা সেবনকালে অসংলগ্ন অবস্থায় তার তিন সঙাগীসহ আটক করে র‌্যাব। ঠিক একই রকম অনৈতিক কাজের অভিযোগে এবার চিত্রনায়িকা কেয়াকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার গুলশানের নিকেতনের একটি বাড়ি থেকে আটক করার পর পুলিশ তাকে গুলশান থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, অনৈতিক কাজের অভিযোগে চিত্রনায়িকা কেয়াকে আটক করা হয়েছে।

রাত ১০টা ৪০মিনিটে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ সময় আরও নয় জন নারী ও পুরুষকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গুলশান থানা পুলিশের একটি দল নিকেতনের এক নম্বর সড়কের ১৫/১৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশ এখান থেকে কেয়াসহ ১০ জন নারী ও পুরুষকে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক করে। রাত ১০টা ৪০মিনিটের গুলশান থানা এব্যাপারে একটি মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ৪৪।আটকের পর কেয়ার মা থানায় আসেন মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আটককৃতরা ডিএমপি অধ্যাদেশ ১০০/৭৪ ও ১৯৩৩ সালের ৬নং আইনের নীতিহীন ব্যবসা দমন আইনের ৮ ধারায় অপরাধ করেছেন। এ অপরাধের অভিযোগে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুল বারিক বাদী হয়ে সাবরিনা ইতি কেয়াসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাজ্জাদ হোসেন (৪৫) ও সেলিনা ইয়াসমিন পপি (৩৮) বিভিন্ন সময় বাসা পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরে যুবতী-যুবকদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করে আসছে। এদেরকে বাসায় রেখেই ব্যবসা করে আসছিলেন সাজ্জাদ ও পপি।

কেয়া, সাজ্জাদ, পপি ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাবিনা বেগম, খুকু, অরপা, মর্জিনা আক্তার, নাসরিন আক্তার বিউটি, আমেনা খাতুন রুনা ও সোহেলকে। নারীদের সবাই আধুনিক সাজে সজ্জিত, স্মার্ট ও সুন্দরী।
এদিকে গ্রেফতারের পর নায়িকা কেয়াকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে থানায় ফোন আসতে থাকে। পুলিশও শুরুতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা  করেছিল। তার মা গুলশান থানায় এসে কেয়ার বিষয়টি গোপন রাখা ও তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশকে উৎকোচ প্রদানের চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকেও কেয়ার জন্য তদবির করা হয়। কিন্তু বিষয়টি মিডিয়ায় জানাজানি হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ নায়িকা কেয়াকে গ্রেফতার করার খবরটি স্বীকার করে নেয়।

নায়িকা কেয়াকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গুলশান থানার সেকেন্ড অফিসার এম জাবেদ ও ডিউটি অফিসার রাশেদ মোবারক এ বিষয়ে নিজেদের অজ্ঞতা প্রকাশ করে। পরে অবশ্য বিষয়টি মিডিয়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে ডিউটি অফিসার স্বীকার করে নেন, অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটককৃত নারীদের মধ্যে একজন হলেন নায়িকা কেয়া। পুলিশ জানায়, কেয়াসহ অন্যদের থানা হাজতে রাখা হয়েছে। সকালে কোর্টে চালান করা হবে।

অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন নায়িকা কেয়া। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কঠিন বাস্তব’ ছবিতে আমিন খানের সঙ্গে প্রথম যখন অভিনয় করেন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪। এরপর টানা প্রায় ডজন দুয়েক ছবিতে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে কেয়া প্রয়াত নায়ক মান্না, রুবেল, আমিন খান, রিয়াজ, ফেরদৌস আর শাকিব খানের মতো হিরোদের বিপরীতে একসময় অভিনয় করেছেন।

সুন্দরী এই নায়িকা ‘তিব্বত স্নো’ বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হয়ে তৈরি করেন ক্রেজ। তারপর একে একে তিব্বত লিপজেল, সাগুপতা, জিএমজি এয়ারালাইন্স, বসুধা হাউজিংসহ বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেন।
বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবে ঢালিউডের নায়িকাদের মধ্যে কেয়া ছিলেন সবচেয়ে সফল। সাফল্য যখন তার পিছু নেয় ঠিক তখনই রহস্যজনকভাবে তিনি নিজেকে আড়াল করে নেন। জড়িয়ে যান ব্যক্তিগত জীবনের ঝুটঝামেলায়।
চলচ্চিত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও নিজের খামখেয়ালিপনায় হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের মধ্যে যে কজন উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে সেরা আসনটি অল্প সময়েই দখল করে নেন কেয়া। মালদার একাধিক প্রযোজকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন রোমান্সে। তাদের মধ্য থেকে জুবায়ের নামের এক ধনকুবেরের হাত ধরে তিনি পাড়ি দেন আমেরিকা। কিন্তু দু’বছর ঘুরার আগেই সেই সম্পর্কে ইতি টেনে দেশে ফিরেনকেয়া।

আমেরিকা থেকে দেশে ফিরার পর কেয়া মিডিয়ায় নিয়মিত কাজ করবেন বলে ঘোষণা দেন। বেশক’টি ছবিতেও তিনি কাজ করেন এবং চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু আবারও কেয়ার আচরণ রহস্যজনক হয়ে পড়ে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি। ঢাকার কাকরাইলের বাবুল নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে আবার চলে যান স্বেচ্ছা নির্বাসনে। অবশ্য তার দ্বিতীয় বিয়েও টিকেনি। জোট সরকারের আমলে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও গড়ে উঠেছিল কেয়ার ঘণিষ্ঠতা।

শোবিজ থেকে  প্রায় হারিয়ে যাওয়া কেয়া অবশ্য নতুন করে হালে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবারও নতুন করে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। নতুন নায়ক আবিরের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ শুরু করেন আবুল খায়ের বুলবুলের পরিচালনায় ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম’ ছবিতে। এ ছাড়াও কেয়ার হাতে থাকা উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে রকিবুল আলম রাকিবের ‘জান তুমি প্রাণ তুমি, বাবুল রেজার ‘কাঁটাদাগ’, রাজু আকবরের ‘রক্তে ভেজা মাটি’, কমল সরকারের ‘এক টাকার ছেলে কোটি টাকার মেয়ে’, প্রভৃতি।

নিজেকে পুনরায় চলচ্চিত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মনোভাব জানিয়ে কিছুদিন আগে কেয়া বলেছিলেন, অতীতের ভুল থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। এবার আমি খুব সতর্ক। অন্ধকার এড়িয়ে খোলা আকাশের ঝলমলে রোদে পিঠটান করে দাঁড়ানোর মতো প্রত্যয় আমার আছে।

কিন্তু মুখে বললেও অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে বেরিয়ে আসতে পারেননি কেয়া। অনৈতিক কমকাণ্ডের অভিযোগে এবার তাই হাজতের অন্ধকারে তাকে মুখ থুবড়ে পড়তে হলো।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/বিনোদন নিউজ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here