নব গঠিত নারায়ণগঞ্জ  সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, আমি শান্তি বার্তা নিয়ে নগরভবনে এসেছি। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিজ বাড়ি শহরের দেওভোগ থেকে পায়ে হেটে নগরভবনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বিজয় হয়েছে জনতার। জয় হয়েছে গণমানুষের। আমরা সন্ত্রাস চাঁদাবাজি চাই না। লক্ষ জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজ আমি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি নগরভবনে। আমি জনগণের প্রার্থী ছিলাম। নির্বাচিত হয়ে এখন জনগণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।

আইভী বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সময়ই খাটো করা হচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না। যেমন সঠিক ছিল না গত ২৭ জুন নগরভবন থেকে আমার চলে যাওয়া। কারণ আমরা লাখো জনতার ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তত্ত্‌বাবধায়ক সরকার বাতিল হওয়ায় যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেখানে অন্তর্র্বতীকালীন প্রশাসক নিয়োগ গ্রহণযোগ্যে নয়। যারা রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তারাই এ ধরণের প্রক্রিয়া চালায়।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু লাখো জনতা সেই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। তৈমুর আলম খন্দাকারকে উদ্দেশ্যে করে আইভী বলেন, আমি পৌরসভায় যখন মেয়র ছিলাম, আপনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন, আমি আশা করব এখন আমাকে আগের মতো সহযোগিতা করবেন। নির্বাচনে আপনার দেওয়া ইস্তেহার বাস্তবায়নে আমাকে সহায়তা করম্নন।

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি শুনুন নারায়ণগঞ্জবাসী কী চায়। আমরা ও নারায়ণগঞ্জবাসী খুন সন্ত্রাস চাই না। সুতরাং সবকিছূ ছেড়ে আসুন একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করি।

মেয়র আইভী আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হবে নির্দলীয়। দল-মত নির্বিশেষে সকলের উর্ধ্বে উঠে আমরা কাজ করব। কারণ আমি আইভী জনতার মেয়র। জনতা যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে, তা বাসত্মবায়ন করতে আমি পিছপা হব না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নেত্রী আপনি আমার কোনো কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় তিনি সরকার, নিবর্বাচন কমিশন, নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন ও গণমাধ্যেমকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, গণমাধ্যম না থাকলে ভোট কারচুপির আশঙ্কা ছিল। এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নারায়ণগঞ্জে ইতিহাস হয়ে থাকবে।

আইভী বলেন, নির্বাচনের শুরম্নর দিকে আমার সঙ্গে গুটিকয়েক শুভাকাঙ্খী ছিল। ধীরে ধীরে দূরের ?মানুষ কাছে চলে আসে। আর কাছের কিছু মানুষ দূরে চলে যায়। কিন্তু আমি সাহস হারাইনি। কারণ ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময় ছিল। আমি তখন দলের হাল ধরেছিলাম। কিন্তু নারায়নগঞ্জের যারা নিজেদের সিংহ পুরম্নষ বলে দাবি করে, তা পালিয়েছিল।

সব শেষে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যে দলেরই হোন না কেন, দল মতের উর্ধ্বে এসে উন্নয়নের জন্য কাজ করুন।

এর আগে সকাল ১১টায় ডা. সেলিনা হায়াত আইভী শহরের পশ্চিম দেওভোগ এলাকার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে শহরের চাষাড়া মোড় হয়ে ১২টা ২০ মিনিটে নগরভবনে পৌঁছান। এ সময় আইভীর পেছনে ও রাসত্মার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ বাদ্য বাজিয়ে, ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে আইভীকে অভিনন্দন জানান।

আইভীর বক্তব্যের পর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন প্রশাসক মো. শাহ কামাল। এ সময় সুশীল সমাজের লোকজন ও নারায়ণগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here