নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার একটি বাসে ডাকাতি করার সময় গণপিটুনিতে সন্দেভাজন ২ডাকাত নিহত হয়েছে। পারিবারের সদস্য এবং এলাকার কিছু মানুষের দাবী পরিকল্পিতভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার মধইল-আগ্রাদ্বিগুন মহাসড়কের লোদিপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। গণপিটুনীতে হত্যার শিকার সন্দেহভাজন ডাকাতরা হলো- ধামইরহাট উপজেলার দেশাহার গ্রামের তছির উদ্দিনের ছেলে ফজলুর রহমান ওরফে ভেদু (৫০) এবং একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে শাজাহান আলী (৪০)।

এ ব্যাপারে পত্নীতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম জানান, নওগাঁ থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ছেড়ে আসা আগ্রাদ্বিগুনগামী একটি যাত্রীবাহি বাস (বগুড়া ব-৪৬৯৮) রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে একদল ডাকাত রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতি করতে থাকে। ডাকাতরা ঐ বাসের ড্রাইভারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কন্টাক্টরের নিকট থেকে ৫হাজার ৯শ টাকা, মোবাইল ফোন এবং সে সময় বাসে উপস্থিত ৯জন যাত্রীর নিকট থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। তারা ডাকাতি শেষে ড্রাইভারকে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। বাসটি সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দুরে আগ্রার মোড়ে গিয়ে অনেক লোকজন দেখে সেখানে বাসটিকে ড্রাইভার দাঁড় করায়।

ঘটনাস্থল আগ্রার মোড়ের বেশকিছু লোকজন জানান, বাস ডাকাতির পূর্বে আগ্রাদ্বিগুন হাট থেকে বাড়ি ফেরা কিছু হাটুরের নিকট থেকে সর্বস্ব ছিনতাই করা হয়েছে। এই সংবাদ পেয়ে সেখানে এসব লোকজন জমা হয়েছিল। সেখানে জমা হওয়া সকল লোকজন ঐ বাসে চড়ে ডাকাতি হওয়া স্থানে চলে আসেন। সেখানে এসে তারা দেখতে পান যে, ডাকাতির সময় সেখানে পড়ে থাকা মটরসাইকেলটি উঠিয়ে নিয়ে ২জন লোককে চলে যেতে দেখে সকলে মিলে তাদের আটক করে। কারন বাসের ড্রাইভার ঐ দুজনের একজনকে ডাকাত হিসাবে সনাক্ত করেন। তখন ওই ২ব্যক্তিকে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনী দিতে শুরু করে। বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা স্থানীয় লোকজন এক পর্যায় লোদিপুর মাদ্রাসার একটি ঘরে ওই ২জনকে নিয়ে গিয়ে মারপিট করতে থাকে। এক পর্যায় ঘটনাস্থলেই তাদের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।

সংবাদ পেয়ে রাতেই নওগাঁর পুলিশ সুপার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, পত্নীতলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পত্নীতলা থানা পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে রাতেই থানায় নিয়ে আসে। পরদিন গতকাল বুধবার ময়না তদন্তের জন্য লাশ দুটি নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। বাসের ড্রাইভার আলামীন বাদি হয়ে ধামইরহাট থানায় রাস্তায় গাছ ফেলে ডাকাতি এবং জনতা কর্তৃক পিটিয়ে হত্যা সম্পর্কিত পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে নিহত দু’ব্যক্তির পারিবারিকভাবে দাবী করা হয়েছে যে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা কোন ডাকাতির সাথে জড়িত নয়।

নিহত ফজলুর রহমানের ভাই মিজান জানান, তার ভাই আওয়ামী লীগ করলেও বিএনপির নেতাদের সাথে বেশ সখ্যতা থাকার কারনে একটি মহল এটিকে ভালো চোখে দেখত না। এদিকে খেলনা ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ চৌধুরী জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/তন্ময় ভৌমিক/নওগাঁর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here