অস্ত্রোপচারের তিন মাস পর আজই প্রথম জনসভা করার কথা ছিল কংগ্রেস সভানেত্রীর। কিন্তু সেই শরীরই বাদ সাধল। অসুস্থতার কারণে উত্তরাখণ্ডে যেতে পারলেন না সনিয়া গাঁধী। দশ জনপথ সূত্রে জানানো হয়েছে, সনিয়া ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে জ্বরে কাবু হলেও সনিয়ার লিখিত বক্তৃতায় ঝাঁঝের কোনও খামতি ছিল না। বস্তুত দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে এই প্রথম অণ্ণা হজারের শিবিরকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। ছেড়ে দেননি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-কেও। নাম না-করেই অণ্ণাদের আন্দোলনকে তাঁর কটাক্ষ: “শুধু বক্তৃতা দিয়ে দুর্নীতি রোখা যাবে না।” আর বিজেপি-র উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য: “আমার দুর্নীতি পবিত্র, আর তোমার দুর্নীতি কলঙ্ক এ কথা বললে চলবে না।”
আগামী ফেব্রুয়ারিতে উত্তরাখণ্ডে নির্বাচন। তাই হৃষীকেশ ও কর্ণপ্রয়াগের মধ্যে নতুন রেল লাইনের শিলান্যাস ও গৌচরের সভার মধ্যে দিয়ে পুরোদস্তুর ভোট প্রচার শুরু করে দিতে চেয়েছিলেন সনিয়া। সঙ্গে অবশ্য আরও বড় উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, দলের সর্বস্তরের কর্মী-সমর্থকদের বুঝিয়ে দেওয়া যে, তিনি সুস্থ রয়েছেন এবং আগের মতোই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। বস্তুত, রাহুল গাঁধীকে এখনই দলের সভাপতি করা হবে, এই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৪ ঘণ্টা আগেই কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছিল, সনিয়াই আপাতত দল চালাবেন। কিন্তু বিধি বাম। উত্তরাখণ্ডে যেতে না পারায় সেই উদ্দেশ্য পূরণ হল না।
সনিয়ার দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল, একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস ও অণ্ণা হজারের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস বিরোধিতার যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলায় দৃঢ় বার্তা দেওয়া। লিখিত বক্তৃতায় সেই কাজটি অবশ্য ভাল ভাবেই সেরেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।
নিজের বদলি হিসেবে আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিকে গৌচরে পাঠিয়েছিলেন সনিয়া। তিনিই সনিয়ার বক্তৃতা পাঠ করেন। সেখানে এই প্রথম অণ্ণাদের ঝাঁঝালো আক্রমণ করে কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, “দুর্নীতি সমাজের মহামারী। এই রোগ দূর করতে গেলে সবাইকে আত্মমন্থন করতে হবে। শুধু ভাষণ দিলেই কি দুর্নীতি দমন হবে? আমি প্রশ্ন করতে চাই, তথ্যের অধিকার আইন কে প্রণয়ন করেছে? কে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা আনতে চেয়েছে? আমরা। এমনকী আমার নেতৃত্বে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদই প্রথমে লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। সেই লোকপাল বিল সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পেশ হবে এবং পাশও হবে। তা নিয়ে এত হল্লা করার কী আছে?”
প্রসঙ্গত, অণ্ণাদের জন লোকপাল বিল অনুসরণ করে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার সম্প্রতি লোকায়ুক্ত আইন পাশ করেছে। আর তার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী ভুবনচন্দ্র খান্ডুরির প্রশংসায় পঞ্চমুখ অণ্ণা ও তাঁর সহযোগীরা। ফলে অণ্ণাদের উদ্দেশে সনিয়ার আজকের সমালোচনা উত্তরাখণ্ডের রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করা হচ্ছে। তা ছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগেই সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডে রমেশ পোখরিয়ালকে সরিয়ে খান্ডুরিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে বিজেপি। এই অবস্থায় দুর্নীতির প্রশ্নে ‘আমরা-ওরা’ ছাড়তে বলে তাদেরও আক্রমণ করতে চেয়েছেন সনিয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই আজ সনিয়ার পাল্টা সমালোচনা করেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভাষণ দেওয়া ছাড়া সরকার কী করেছে সেটা সনিয়া গাঁধীই জানান। স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম, কমনওয়েলথ গেম্স কেলেঙ্কারিতে শীলা দীক্ষিতকে কেন তিনি আড়াল করছেন? আসলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয়ের অপরাধে মনমোহন-সনিয়াও অপরাধী।”
অণ্ণাদের সমালোচনার পাশাপাশি আজ মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন সনিয়া। তাঁর কথায়, খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে সরকারের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেটা ঠিক। তবু মানুষকে যথাসম্ভব সুরাহা দিতে চেষ্টা করুক সরকার।

সূত্র : আনন্দবাজার

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/নিউজ ডেস্ক

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here