আমজাদ হোসেন শিমুল

আমজাদ হোসেন শিমুল :: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে ধূমপানমুক্ত একটি সোনার বাংলা উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ দিতে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে সচিবালয় পর্যন্ত সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য দরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের শতভাগ বাস্তবায়ন। পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ কিংবা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে এ সম্পর্কিত নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি। আর এজন্য স্থানীয় সরকারের এই পর্যায়গুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি বাজেট বরাদ্দ রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে শুধু বেশি বেশি বাজেট বরাদ্দ করে রেখে দিলেই চলবে না। এজন্য বরাদ্দকৃত বাজেট খরচ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হতে হবে অনেক বেশি আন্তরিক।

কেননা দেশের উত্তরাঞ্চলের দুটি সিটি কর্পোরেশনসহ (রাজশাহী ও রংপুর) বিভিন্ন জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভার তামাকখাতে বিগত ৬ অর্থবছরের (২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০) বরাদ্দকৃত বাজেট ও ব্যয়িত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- বরাদ্দকৃত বাজেটের চেয়ে এই খাতে খরচ করা হয়েছে খুবই কম (সূত্র: সংশ্লিষ্ট দপ্তর)। আমরা যদি চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তামাকখাতে বরাদ্দকৃত বাজেটের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে- তামাক বা স্বাস্থ্যখাতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ছিল এক লক্ষ টাকা। রংপুর সিটি কর্পোরেশন ৫ লক্ষ টাকা, রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভা এই খাতে বাজেট বরাদ্দ রেখেছিল ৬০ হাজার টাকা, নওগাঁ পৌরসভা ১৫ হাজার টাকা, বগুড়া পৌরসভা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, সিরাজগঞ্জ পৌরসভা ২ লক্ষ টাকা, রায়গঞ্জ পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, চাঁপাইনাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, নাটোর পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, পাবনা পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, জয়পুরহাট পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, পঞ্চগড় পৌরসভা ২ লক্ষ টাকা, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা ৮০ হাজার টাকা, রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভা ১৫ হাজার টাকা, কুড়িগ্রাম পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, লালমনিরহাট পৌরসভা ১৫ হাজার টাকা, দিনাজপুর পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা, দিনাদপুরের বিরামপুর পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, নীলফামারী পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভা ৫০ হাজার টাকা, গাইবান্ধা পৌরসভা ১ লক্ষ টাকা এবং গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা তামাকখাতে ২৫ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখেছিল (সূত্র : সংশ্লিষ্ট দপ্তর)। তবে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দকৃত বাজেটের কী পরিমাণ খরচ করা হয়েছে সেই পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি।

কিন্তু এর আগের অথবছরেও (২০১৮-১৯) তামাক কিংবা স্বাস্থ্যখাতে উল্লেখিত পৌরসভাগুলো ২৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ রেখে খরচ করেছে ৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পৌরসভাগুলো ২৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখে খরচ করেছে মাত্র ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা। একইভাবে তার আগের অর্থবছর অর্থাত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পৌরসভাগুলো ২৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা তামাকখাতে বাজেট বরাদ্দ রেখে খরচ করেছে ৭ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা, ঠিক তার আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এই খাতে পৌরসভাগুলো ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখে খরচ করেছে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ১০০ টাকা। অনুরূপভাবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের উত্তরাঞ্চলের এই পৌরসভাগুলো তামাকখাতে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখে খরচ করেছে মাত্র ১ লাখ ২৭ হাজার ৬০০ টাকা (সূত্র : সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব দপ্তর)।

বিগত ৬ অর্থবছরে উত্তরাঞ্চলের তামাকখাতে বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে ব্যয়িত বাজেটের পরিসংখ্যান দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। কেননা- প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ উপহার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সেই অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তার একার পক্ষে এই মহতি উদ্যোগটি কিন্তু বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তামাকমুক্ত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে সকলের ঐকান্তি প্রচেষ্টা একান্ত প্রয়োজন। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভাগুলোর অধিকাংশই ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভাগুলো তামাকখাতে নির্দিষ্ট একটি অংকের বাজেট বরাদ্দ রেখেছে। আমি আশা করবো  এবার অন্ততপক্ষে সত্যিকার অর্থে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খরচ করবে।

তবে এজন্য সরকারের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যেকটি সেক্টরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন কিংবা পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে তামাকখাতে বেশি বেশি বাজেট বরাদ্দ রেখে তার পুরোটাই বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে খরচ করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে একটাই ‘২০৪০ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার’। তাহলেই আস্তে আস্তে তামাকের ভয়াল থাবা থেকে একদিন প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষা পাবে। সেই সাথে তামাকের কারণে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এই দেশটি স্বাস্থ্যসম্মত একটি সোনার বাংলায় রূপান্তিত হবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

লেখক: সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here