সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ::
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে গলাচিপা উপজেলার ৪২টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৮টি স্কুল, ২১টি মাদরাসা, দুটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং একটি কলেজ রয়েছে। ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত সংস্কার করা না হলে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূলে আঘাত হানে। এতে অনেক স্কুল ও মাদরাসা টিনশেড ঘরগুলো দুমড়ে মুচড়ে মাটির ওপর পড়ে আছে। টিনের চাল ও বেড়া ভেঙে বসার বেঞ্চগুলোর ওপর পড়ে আছে। আধা পাকা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ বিব্বস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলো হলো, সুহরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চর আমখোলা নিম্ন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পূর্ব গোলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উত্তর আমখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এলেমাবাদ সালেহিয়া দাখিল মাদরাসা, মধ্য পাড় ডাকুয়া ছালেহিয়া দাখিল মাদরাসা, ইচাদি নেছারিয়া দাখিল মাদরাসা, মুরাদনগর আহমাদিয়া মাদরাসা, রহমগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদরাসা।
উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের রহমগঞ্জ হামিদিয়া দাখিল মাদরাসা সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো: সাইদুর রহমান জানান, ‘আমখোলার স্থায়ী বাসিন্দা এম.এ. মান্নান ১৯৭৮ সালে ১২০ শতাংশ জমির ওপর মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। মাদরাসাটিতে অদ্যবধি পর্যন্ত কোনো বহুতল ভবন নির্মিত হয়নি। বর্তমানে ৩০০ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে ১১ জন এবং কর্মচারী রয়েছে চারজন।’
তিনি আরো জানান, ‘ঘূর্ণিঝড়ে একটি টিনশেড ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট অসম্পূর্ণ একটি টিনশেডে ১০টি শ্রেণির পাঠদান চলছে। মাদরাসাটির কার্যক্রম চলছে ঠাসাঠাসি করে। এতে করে বিপাকে রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এভাবে চললে শিক্ষার্থীরা পাঠের প্রতি তাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে।’
চর আমখোলা বালিকা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মোজাহারুল ইসলাম জানান, ‘নারীদের শিক্ষায় এগিয়ে নিতে গলাচিপা মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান মিয়া ১৯৯৬ সালে আমখোলা ইউনিয়য়ের ২ নম্বর ওয়ার্ড চর আমখোলা গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাতজন শিক্ষক আছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি মাত্র ঘর, যা ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মাথার ওপরে ছাউনি না থাকায় বৃষ্টি আসলেই ছুটি দিতে বাধ্য হয়।’
উত্তর আমখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো: আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ৪০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রতিষ্ঠানের একটি আধা পাকা ঘরের ছাউনি উড়ে যায় এবং দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
’গলাচিপা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: রেজাউল কবীর জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।’
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here