সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ::
‘কাঁচা অবস্থায় খায়, পাকা অবস্থায় খায়, দীর্ঘদিন ফেলে রাখলেও খাওয়া যায়’ প্রচলিত এমন বুলির সাথে জুড়ে আছে তালের কথা। সারাদেশের মতো উপকূল জুড়ে যখন বইছে তাপপ্রবাহ ঠিক তখনই দিন-রাতের এই খরতাপ থেকে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে গলাচিপায় কদর বেড়েছে রসালো তালের শাঁসের। দিনের বেলায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির তালের গাড়ির পাশে ক্রেতাদের ভীড় দেখা যায়।
সরেজমিনে গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তালের শাঁসের বিক্রেতা দেখা গেছে। তারা পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে। দিনে রোদের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে তালের শাঁসের চাহিদাও। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। দামের বিষয়টি বিবেচনা করছে না ক্রেতারা। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাঁস। আবার অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন রসালো এ ফল।
এ দিকে, মৌসুমী ফল হিসেবে তালের শাঁস অবদান রাখছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও। তাজা ও ফরমালিনমুক্ত তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল।
গলাচিপা সদর ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামের সালাম ডাক্তারের ছেলে ও তাল বিক্রেতা হাবিব (৩২) জানান, গরমে তালের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। সব বয়সের লোকেরাই এটি পছন্দ করে। এক শ’ তাল মালিকের কাছ থেকে চার শ’ টাকা মূল্যে কিনে আনা হয়। গাছ থেকে তালের কাঁদি কেটে বাজারে এনে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিনই তিন শ’ থেকে সাড়ে তিন শ’ তাল নিয়ে আসা হয়। প্রতিটি তাল আকার ভেদে পাঁচ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। একটি তালে দু’টি বা তিনটি শাঁস থাকে। কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। প্রতিদিন আট শ’ থেকে বারো শ’ টাকা লাভ হয়।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মৌসুমী ফল বিক্রি করেন। ফল বিক্রির টাকা দিয়ে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ভালোভাবেই জীবনযাপন করেন। এ সময় তিনি করুন সুরে জানান, গলাচিপা পৌরসভার যেকোনো প্রান্তে গাড়ি নিয়ে তাল বিক্রি করলে তাকে দৈনিক ৫০ টাকা হারে ইজারাদারদের দিতে হয়। এটা দেয়া না লাগলে পরিবার নিয়ে আরো ভালো থাকতে পারতেন।
এছাড়াও তালের শাঁস বিক্রি করেন মুরাদনগর গ্রামের কামাল চৌকিদার ও নূর জামাল মীর। তারাও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন এই তালের শাঁস।
তালের শাঁসের ক্রেতা এনজিও কর্মী নিতুষ মন্ডল (৪০), মিলন মিয়া (২৫) এবং শিক্ষার্থী সুবর্ণা (১৬) জানান, গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে প্রতিদিনই মৌসুমী ফল তালের শাঁস কিনে খাচ্ছেন। এটি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
গলাচিপা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, বজ্রপাত রোধে বিভিন্ন রাস্তার ধারে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে। এটি মাটি ধরে রাখতে সাহায্য করে। কৃষি অফিস ও বিভিন্ন সংগঠনের আলাদাভাবে তালের গাছ রোপণ করে আসছে। এসব গাছের তাল পাকানোর জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে বীজ করা যায়।
গলাচিপা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: মেজবাহ উদ্দিন জানান, তালের শাঁস প্রাকৃতিকভাবে দেহকে ক্লান্তিহীন রাখে। গরমের তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানিশূন্যতা দূর করে। তালে থাকা ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত, লিভারের সমস্যা ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণ, ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে দারুণ ভূমিকা রাখে। তালে বিদ্যমান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তাল বমিভাব এবং বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here