বন্ধু সাংবাদিক আইফার রহমানের মৃত্যুর খবর আমার জন্য খুবই বেদনা দায়ক। বিষয়টি কোন অবস্থাতেই মনমানতে চাইছেনা। আমার বার্ডেমের চিকিৎসাধিন অবস্থায় যে, আমাকে কোন করে সাহস দিয়েছিল “ এতো কঠিন রোগ নিয়ে আমি এখন বেচে আছি আর আপনি ফিরোজ আহমেদ রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছোট্ট অপারেসানের চেনশান করে নাকি ডায়বেটিস বাড়াচ্ছেন”। এটা সত্যযে বেশ কিছুদিন মরন ব্যধি ক্যানসার এর সাথ যুদ্ধ করে আইফার বেচে ছিল। আমার অসুস্থ অবস্থায় বহু টেলিফোন কল পেয়েছি, এটা সত্য যে ক্যানসার জোয়ি আইফনেরর টেলিফোনকল আমাকে উদিপ্ত করেছিল সেই আইফার এমনি করে খবরের কাগজে শোক সংবাদে পরিনত হবে এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাকে প্রদত্ত গার্ডঅফ অনারের মাঝখানে প্রট্রেটর এর ছবিতে রুপ নেবে এটি আমার জন্য দুঃসহ কষ্টের। রাজনৈতিক ভাবে দুজনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকলে অসমপ্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশের প্রতি ভালবাসায় আমরা দুজনেই দৃহ ছিলাম বলে ভিন্নপেশায় থাকালেও আইফার আমার বন্ধু, স্বজন। মাস দুই আগে হেটে যাচ্ছিলাম ম্যাটেরনিটি হাসপাতাল রাস্তা দিয়ে, পেছন দিক থেকে আইফার আমাকে ডাকলেন, বললেন আপনিকি সুখবর শুনেছেন, ডাক্তার সমস্ত পরীক্ষ নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন দিয়েছে তার শরীরে ক্যানসারের জীবানু নেই। সুখবরটি শুনে আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। সমপ্রতি আইফার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর সাইকেলে চড়তেন না অন্য সময় আইফারের বাহন ছিল সাইকেল। আমি সোজা শামছুর রহমান রোডে এগিয়ে গেলান আমি আমার দেশ পত্রিকা অফিসে ডুকলো। সম্ভাবত অসুস্থ হয়ে আমার ঢাকায় যাওয়ার পূর্বে আরএকবার আইফারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল রাস্তায়। আইফার বলেছিল মুক্তিযোদ্ধা, কবি ও গীতিকার সাঈদ আলী ভাই খুবই অসুস্থ আপনাকে দেখতে চেয়েছেন। আমি আইফারের সংবাদে সিমেট্রি রোডে সাঈদ আলী ভাইকে দেখতে গিয়েছিলাম এই হচ্ছে মহতি হৃদয়ের মানুষ আইফার যে কবি সুকান্তের মতো ঘরে ঘরে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে অথচ নিজের ঘরে নেই বাতি জ্বালার সামার্থ। খুলনা টেক্সটাইল মিলস স্কুলে একসময় চাকুরি করতো আইফার মিলটি বন্দ হয়ে গেলে সে চাকুরি সংকটে পড়ে। আমি জানি আইফার চেষ্টা করছিল তার নিজের স্বার্থে নয় স্কুলটির ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া যাতে অব্যহ থাকে সেজন্য স্কুলটিকে রক্ষা করার জন্য এই ছোটাছুটি ও তদ্বির করছিল সে। কিন্তু নিজে মারাত্নক অসুস্থ হওয়ার কারনে ঐকাজে ভাটা পড়ে। একবার টেক্সটাইল মিলস গেটে (তখন মিল চালু ছিল) স্কপের গেট সভা করে আমি শ্রমিক নেতা মিলন সহ অনেকে গেটের সামনের চায়ের দোকানে আইফারের আমন্ত্রনে চা ডালপুরি খেয়েছিলাম। রাত গভির হওয়ায় আইফার তার সাইকেলে করে আমাকে লিফট দিতে চেয়েছিল এই বয়সে আমি রাজি হয়নি। মনে পড়ে একদিন দুপুরে কোর্টে হাজির বললো জাতিয় কবিতা পরিষদের কেন্দ্রিয় সাধারন সম্পাদক ছাড়াকার কবি গোলাম কিবরিয়া ইনুকে ফোন করে দিতে হবে। ইনু ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতো আমার পরিচিত। ফোনের কারনটি হচ্ছে আইফার তিলতিল করে নিজের শ্রমার্জিত অর্থদিয়ে খুলনাতে যে জাতিয় কবিতা পরিষদ সংগঠন গড়ে তুলেছে তার বিপক্ষে কয়েকজন পালটা কমিটি করেছে আমি জানি প্রতিমাসে আইফার একজন অস্বচ্ছল মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নিচ পকেটের অর্থ দিয়ে উমেষচন্দ্র লাব্রেরীতে জাতিয় কবিতা পরিষদের অনুষ্ঠান করতো। সংগঠনটি সেই ছিল মূল প্রান। ততক্ষানাত আমি ইনুকে ফোন করি এবং বলি আইফার আমার বন্ধু কেন্দ্র কমিটি যেন আইফারের কমিটিকে অনুমোদন করে। বন্ধু আইফারের সঙ্গে আমার একটা অপূর্ব মিল হচ্ছে আমরা সততাও নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের কাজ করেছি। কিন্তু একটি কুচক্রিমহল সবসময় আমাদের দুজনের চলার পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। আইফারের সবথেকে বড় গুন হচ্ছে সে মুক্তিযোদ্ধা ছিল, খুলনার সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিার সিনিয়র সাংবাদিক ছিল কিন্তু নিজেকে এসব পরিচয় দিয়ে কখনো বড়ায় করতো না। কিংবা এ পরিচয় ব্যবহার করে অসৎভাবে অর্থ উপার্জন করেনি। আমদের এই সমাজে আইফারের মতো নির্লোভ ও ভালমানুষ পাওয়া দুসার্ধ। জীবন হচ্ছে বহতা নদীর মতো, জীবনে আইফারের মতো হৃদয়বান, সংবেদনশীল বন্ধু পাওয়া কঠিন। আইফারকে চিরদিনের মতো হারিয়ে আমার জন্য তাই অতিব ক্ষতির- যে ক্ষতি সহজে পূরন হবে না।
এ্যড: ফিরোজ আহমেদ