খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) পরিচালিত নগরীর জোড়াগেটে কোরবানীর পশুর হাট শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে। গতকাল শনিবার দিনভর গরু-ছাগল বিকিকিনি হয়েছে। মোলাহাট থেকে আসা ৪ বছর বয়সী গরুটির দাম হেকেছে ক্রেতা ২লাখ টাকা। এটিই হাটের সবচেয়ে আর্কষণীয় গরু। বিভিন্ন স্থান থেকে যারা হাটে গরু নিয়ে এসেছেন পথে পথে তাদেরকে চাঁদা দিতে হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন। হাটের চারিপাশে পুলিশী পাহারা রয়েছে। নগদ অর্থের নিরাপত্তার লক্ষে সোনালী ব্যাংক বুথ স্থাপন করেছে। বিকেলে পর থেকে ট্রাক ও পিকআপ যোগে বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় সাইজের গরু আসছে। নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পেরুলি এলাকার ইমদাদ জানান, তিনি মিনি ট্টাকে করে ১৫টি গরু এনেছেন। পেরুলি থেকে জোড়াগেটে গরুগুলো আনতে তিনটি স্থানে তাকে ২০০টাকা এবং ১০০টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। একদল যুবক এই চাঁদা নিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একই এলাকার মোসলেম মিয়া জানান, তিনি একসঙ্গে ১০টি গরু এনেছেন। দুটি স্থানে তাকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। চাঁদা না দিলে ট্টাক আটকে রাখা হবে বলে চাঁদা আদায়কারীরা তাকে ভয় দেখায়। উপায়ন্ত না দেখে তিনি চাঁদা দিয়েছেন। নওয়াপাড়ার আফজাল জানান, তিনি এক সঙ্গে ২০টি গরু এনেছেন। দুটি স্থানে তার কাছ থেকে ২০০টাকা এবং ১৫০টাকা করে চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতিটি গরুর ট্টাকে চাঁদা আদায় হচ্ছে। পুলিশও জানে কিন্তু কিছু বলে না। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাটের গরু ব্যবসায়ী আনিছ অভিযোগ করে বলেন, বেলা ১১টায় তিনি নয়টা গরু নিয়ে জোড়াগেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে খেয়াঘাট এলাকায় তার কাছ থেকে একদল যুবক ২০০টাকা করে চাঁদা নিয়েছে। রূপসা উপজেলার রামনগর এলাকার শুকুর মৃধা জানান, ৬টি গরু নিয়ে জোড়াগেটে আসার পথে কয়েকজন যুবক তার কাছ থেকে ২০০টাকা করে চাঁদা নিয়েছে। জেলা পুলিশের সূত্র জানান, এবারের পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে তেরখাদা উপজেলা সদরের ইখুড়ী কাটেঙ্গা বাজার, রূপসা উপজেলার এলাইপুর মোড়, আইচগাতী আমতলা, রূপসা ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন, পূর্ব রূপসা বাজার, বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ-বাইনতলা, উপজেলা সদর, ফুলতলা উপজেলা সদর, ডুমুরিয়া উপজেলার শাহাপুর, খর্ণিয়া, আঠারমাইল, চুকনগর, বানিয়াখালী, দিঘলিয়া উপজেলার কেটলা বাজার, পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ, এমএ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ, দাকোপ উপজেলার বাজুয়া বাজার, চালনা বাজার, পাইকগাছা উপজেলার বাকাবাজার, চাদখালী বাজার, কাশিমনগর বাজার, কয়রা উপজেলার ঘুগরাকাটি বাজার, দেউলিয়া বাজার ও খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট পাইকারি কাঁচা বাজার। মহানগরীসহ জেলার ২৪টি কোরবানীর পুশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার জন্য ৩৮৩জন কর্মী নিরাপত্তার নিয়োগ করা হবে। এছাড়া সাদা পোষাকে র‌্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষনিক নজরদারী করবে। জাল টাকা অনুপ্রবেশ রোধে জেলার পশুর হাটগুলোতে পুলিশ পর্যায়ে ক্রমে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করবে। এ ধরনের উদ্যোগ খুলনায় এই প্রথম। ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করেছে। খুলনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম এ প্রতিবেদককে জানান, কোরবানীর পশুর হাটে এবং হাটে যাওয়া আসা পথে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, প্রত্যেক হাটে ১জন অফিসারের নেতৃত্বে ৭জন সশস্ত্র সিপাহী এবং প্রত্যেক উপজেলায় ১জন অফিসারের নেতৃত্বে ৫জন সশস্ত্র পুলিশ গাড়িযোগে টহল দিচ্ছে। জেলার গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর শফিউলাহ মোলা জানান, জাল টাকা অনুপ্রবেশ রোধে পর্যায় ক্রমে প্রত্যেকটি হাটে পুলিশের তত্ত্বাবধায়নে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবের গাড়ি টহল দিচ্ছে। সাপ্তাহিক পশুর হাটগুলোতে স্বাভাবিক টহল চলছে। তিনি বলেন, জাল টাকা প্রতিরোধে র‌্যাবের গোয়েন্দা কর্মীরা নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বাজার সুপার জানান, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত নগরীর জোড়াগেট পাইকারী কাঁচা বাজারে পশুর হাট বসবে। অন্যান্য বারের মতো এখানেও পুলিশ ক্যাম্প ছাড়া কর্পোরেশনের ৪০জন নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here