পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলে চামড়ারা ব্যবসায়ীরা ক্রেতাশূন্যতার কারণে ৭ লাখ পিস গরু ও খাসির চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ট্যানারি মালিকরা এখনও তেমন ক্রয় শুরু না করায় ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছে ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া ব্যবসার ধস ঠেকাতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছে বলেন ব্যবস্থা না নিলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।

পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার চামড়ার বাজারের খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, কয়েক লাখ পিস চামড়ার রুপ নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে চামড়া ক্রয়ে ট্যানারিগুলো এগিয়ে না আসায় ৫০ শতাংশ চামড়ায় লবণ মাখিয়ে রেখে বিক্রির অপেক্ষায় বসে আছে ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা সদরের চামড়ার বাজারে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পিস গরু ও ৪০ থেকে ৪৫ হাজার পিস খাসির চামড়া আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে উত্তরের ১৬ জেলায় প্রায় ৫ লাখ গরু ও ৮ লাখ খাসির চামড়া উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২ লাখ গরুর ও ৪ লাখ পিস খাসির চামড়া বিক্রি হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে ৩ লাখ গরুর ও ৪ লাখ পিস খাসির চামড়া। এসব চামড়া ব্যবসায়ীর ভাগ্য এখন ট্যানারি মালিকদের ওপর নির্ভর করছে। ট্যানারি মালিকরা এসব চামড়া না কিনলে সীমান্ত পেড়িয়ে ভারতে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রত্যেক কোরবানীর ঈদেই চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু এবার চামড়ার দর নির্ধারণ করে না দেওয়ায় চামড়া নিয়ে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। চামড়ার কোনো মূল্য নির্ধারণ না করায় ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছামতো মূল্য নির্ধারণ করছে। ট্যানারি মালিকরা প্রতি ফিট গর“র চামড়া ৬০ থেকে ৭৫ টাকা এবং খাসির চামড়া প্রতি ফিট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের আগে দাম নির্ধারন না করায় বর্তমানে ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেকেই চামড়া কিনেছেন বেশি দামে। এর পর লবনের মূল্যও বেড়েছে বস্তা প্রতি ২’শ থেকে ২’শ ৫০ টাকা করে। সব মিলিয়ে বর্তমান মূল্য অনুযায়ী চামড়া বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে প্রতি ফুটে ১০ থেকে ১৫ টাকা। অনেকেই লোকসানের ভয়ে চামড়ায় লবণ দিয়ে রেখেছেন দাম বৃদ্ধির আশায়।

একাধীক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, আগে থেকে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ না থাকায় তারা প্রতি ফুট চামড়া কিনেছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

কয়েক জন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনতে আসছেন না। ঈদের পর হাতেগোনা যে দু-এক জন এসে ছিলেন তারা সামান্য পরিমাণ চামড়া কিনেই ফিরে গেছেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ বছর ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে ভালো মানের এক পিস চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েছেন ১ হাজার ৫’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ টাকা, মাঝারি মানের চামড়ার দাম বেঁধে দিয়েছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন তারা প্রতি পিস ভালো মানের গরুর চামড়া কিনেছেন ২ হাজার ২’শ টাকা থেকে ২ হাজার ৬’শ টাকা এবং মাঝারি মানের চামড়া ১ হাজার ৫’শ থেকে ১ হাজার ৮’শ টাকায়।

ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া বিক্রি করলে তাদের প্রতি পিস চামড়ায় লোকসান হবে ৫’শ টাকার ওপরে।

ব্যবসায়ীরা চামড়ার এই দর পতনের জন্য ট্যানারি মালিকদের দায়ী করে ব্যবসায়ীরা বলেন, চামড়ার এই দর পতনের জন্য অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। ট্যানারি মালিকরা পরিকল্পিতভাবে চামড়ার ব্যবসায় ধস নামিয়েছেন। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে এবার ভারতে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে ট্যানারি মালিকরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম কম থাকায় এবার চামড়ার দর নিয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কলিট তালুকদার/পাবনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here