ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার দাপনা গ্রামের কৃষাণী সোনাভান এখন আর জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে না। নিজের বাড়িতে তৈরি কেঁচো কম্পোস্ট সার দিয়েই তিনি চাষ করেন তার সকল ফসল। আর এই কেচো কম্পোষ্ট সারই বদলে দিয়েছে তার ভাগ্য।  কমেছে উৎপাদন খরচ, বেড়েছে ফলন। শুধু তাই নয় নিজের উৎপাদিত সার ও কেচোঁ কম্পোস্ট বিক্রি করে আয় করছে হাজার হাজার টাকা।

কালীগঞ্জ উপজেলার দাপনা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের গৃহবধূ সোনাভান। ১ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। বড় ছেলেটি ভ্যান চালক আর বড় মেয়েটি ৮ম শ্রেণীতে ও ছোট মেয়েটা ৫ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে।  স্বামী মশিয়ার রহমান পেশায় একজন দিন মজুর। পরের ক্ষেতে মজুরীর কাজ করে। কোন দিন কাজ হয় আবার কোন দিন কাজ হয় না।

এভাবেই কোনমতে হতদরিদ্র সোনাভান ১ বিঘা ৩ কাটা জমি ক্রয় করেছে। এছাড়াও স্বামী স্ত্রী মিলে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে তারা আরো এক বিঘা পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছে। সোনাভান গত ১ বছর আগেও  জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করত। এতে সে জমি থেকে পর্যাপ্ত ফসল পেত না। অন্যদিকে জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট এবং প্রচুর পরিমানে সার দেওয়ায় খরচ অনেক বেড়ে যেত।

দরিদ্র কৃষাণী সোনাভান জানায়, এক বিঘা জমিতে  ধান চাষ করতে আগে প্রায় ২ হাজার টাকা রাসায়নিক সার  ব্যবহার করতে হতো। এক পর্যায়ে যে জানতে পাতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ছাড়ায় চাষবাদ করার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।  এ কথা জানার পর সোনাভান হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড থেকে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে কম্পোস্ট প্লান্ট তৈরি করার জন্য ১ হাজার টাকা অনুদান দেয়।

উক্ত টাকা দিয়ে বিগত ২০০৮ সালে সে নিজ বাড়িতে ২ চেম্বার বিশিষ্ট একটি কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপন করে। প্রথম তিন মাসে সে প্রায় ২০ মন  কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে। যা দিয়ে সোনাভান  ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষামুলক ভাবে ধান চাষ করে। সে জানায়,তখন এই গ্রামের অনেক চাষী তার এ পরীক্ষামুলক খামারে কেচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার পরামর্শ দিত।

কিন্তু  চাষীদের কথায় কান না দিয়ে  নিজের প্রচেষ্টায় উৎপাদিত কম্পোস্ট সার দিয়ে ধান চাষ করে উক্ত জমিতে প্রায় ২০ মন মিনিকেট ধান পায়। এ চাষে তার খরচ হয় মাত্র ৭৫০ টাকা।

এছাড়া  জমিতে আগাছা নিধন,ধান কাটা, বাধার সমস্ত কাজ করেছে স্বামী স্ত্রী দু’জনে। বর্তমানে সোনাভান ও স্বামী মশিয়ার পরের এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সবজির লাউ ক্ষেত ও অপর ১ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছে।  তিনি আরোও জানান, এই পদ্ধতিতে চাষকরে এখন তার লাভ হচ্ছে অনেক বেশী। আর এই লাভের টাকা দিয়ে তিনি তার মেয়েদের লেখা পড়া চালাচ্ছেন এবং তার সংসারে এখন স্বচ্ছলতা এসেছে।

এ সব ফসলী ক্ষেতে সে তার উৎপাদিত কেচো কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করছে। এখন সোনাভানের দেখা দেখি দাপনা এলাকার অনেক কৃষাণ-কৃষানী অর্গানিক পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার বাদে চাষাবাদ করার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। অনেকে বাড়িতে ছোট ছোট কম্পোস্ট প্লান্ট স্থাপন করে সার উৎপাদন করছে।

কেচো কম্পোস্ট বিষয়ে সোনাভান জানান, একটি সাধারণ কম্পোস্ট প্লান্ট তৈরি করতে সর্বমোট খরচ হয় প্রায় ১ হাজার টাকা। এ সার তৈরি করতে লাগে গরুর গবর, কেঁচো আর পচা কলাগাছ ।

বর্তমানে সোনাভান এলাকার অনেক কৃষকের নিকট ১০ টাকা কেজি হারে কম্পোস্ট সার ও ২হাজার টাকা কেজি কেঁচো বিক্রি করছে। দুর দুরান্ত থেকে অনেক কৃষক তার বাড়িতে এসে সোনাভান ও  স্বামী মশিয়ার রহমানকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি ও কেচো ক্রয় করে নিচ্ছে। তাদের এ চাষাবাদ এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

রাসায়নিক সার ছাড়ায় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব তার দৃষ্টান্ত উদাহরন প্রত্যান্ত অঞ্চলের হতদরিদ্র কৃষানী সোনভান ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহারিয়ার রহমান রকি/ঝিনাইদহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here