ঠাকুরগাঁওয়ে বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে কমলা। জেলার ২২৬ টি বাগানে এখন গাছ ভরে কমলা। কেউ বাগানের কমলা পাকার অপেক্ষায় আছেন, কেউ আগাম বাগানের কমলা বিক্রি করে দিয়েছেন। কমলা ব্যবসায়িরা আগাম কিনে নিচ্ছেন কমলা।

সদর উপজেলার আকচা গ্রামের গোলাম সারোয়ার তাঁর বাগানের কমলা ৫ টাকা পিস হিসাবে ২০০০ হাজার কমলা ১০ হাজার টাকায় আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি জানান, চুরির ভয়ে তিনি আগাম কিক্রি করে দিয়েছেন। আউলিয়াপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের বাগনের গাছ ভরে কমলা এসেছে। তিনিও বাগানের কমলা বিক্রি করে দিয়েছেন।

২০০৬ সালে স’াপিত কমলার বাগান থেকে ৫ বছর পর এখন কমলা ধরেছে। আর তাই এই এলাকায় কমলা চাষের সাফল্য ও ভবিষ্যত উজ্জ্বল বলে কৃষিবিদগন জানান। গত মৌসুমে প্রথম কমলা উৎপন্ন হয় রাণীশংকৈল উপজেলার কাদিহাট গ্রামের রুস-ম আলী ও সদর উপজেলার মুন্সিরহাট গ্রামের ফরহাদ হোসেনের বাগানে। খাসিয়া ও ম্যান্ডারিন জাতের এই কমলার আকার, বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ খুবই উন্নত। তাই এই কমলা অর্থকরী ফসল হিসাবে ক্রমান্বয়ে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কৃষকও এখন কমলা চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। ঠাকুরগাঁও কমলা উন্নয়ন প্রকল্প এবছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে।

কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা ড. বিমল কুমার প্রামানিক জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সদর ও রাণীশংকৈল উপজেলায় গত ৫ বছরে ২২৬ টি বাগান গড়ে উঠেছে।  জেলায় গত মৌসুমে ১৫ টন কমলা উৎপন্ন হয়েছে। এবার ৪০ টন কমলা উৎপন্ন হতে পারে। অনেক কৃষক বাড়ির আশে পাশে কমলার চারা লাগিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও জেলায় ৭৫ হেক্টরে ও পঞ্চগড়ে ১১০ হেক্টরে কমলার চাষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এখন কমলা চাষির সংখ্যা ১১৫০ জন। মোট গাছের সংখ্যা এখন প্রায় ৮০ হাজার। কৃষিবিদদের মতে কমলা চাষের জন্য  ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। জনপ্রিয় এই রসালো ফলের চাষ প্রথমে সখের বশবর্তী হলেও কৃষক কমলাকে এখন বানিজ্যিক ও অর্থকরী ফল হিসাবে দেখছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ইয়াকুবপুর গ্রামের কানাই লাল, আকচা গ্রামের গোলাম সারোয়ার, দেবীপুর গ্রামের ফরহাদ হোসেন, আউলিয়াপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান, রাণীশংকৈল ইউনিয়নের কাশিপুর-কাদিহাট গ্রামের রুস-ম আলী, বনগঁ্রামের সিরাজউদ্দিন ও জগদল গ্রামের আব্দুল রহিমের বাগানের কমলায় রঙ ধরেছে। কানাইলালের বাগানের কমলা স্বাদে ও আকারে আমদানীকৃত কমলার মতো। কানাই লাল বর্মন নিতান- সখের বশে ২০০১ সালে কমলার চারা লাগান। ১০ শতক জমিতে তিনি ৪৩টি নাগপুরি, খাসিয়া ও ম্যান্ডারিন জাতের কমলার চারা লাগান। আকচা গ্রামের গোলাম সারোয়ার ৩ বছর আগে ২ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন কমলার বাগান। তিনি এবার প্রথম কমলা বাজারজাত করতে পেরেছেন। সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম ফেরসাডাঙ্গী।

শহর থেকে ১৪ কিঃমিঃ দূরে এই গ্রামের পরিবারের সংখ্যা ২০০। কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই গ্রামের সব পরিবার কমলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের ২১০ টি পরিবার ৩ হাজার কমলার চারা লাগিয়েছেন। প্রতি পরিবার বসত বাড়ির আশেপাশে ও পতিত জমিতে ১২ থেকে ১৫ টি করে চারা রোপন করেছেন। এই গ্রামের মেম্বার আব্দুর রহমান, সফিরউদ্দিন, খলিলুর রহমান, কেতাবুর রহমান, মঞ্জুয়ারা বেগম, জিল্লুর রহমান, ইব্রাহিম, দেলোয়ার হোসেন ও আলমগীর জানান, তাদের জমি অনুর্বর। চাষাবাদ করে তাদের সংসার চলেনা। হামিদুর, কুদ্দুস, খয়রাত আলী ও কসিরউদ্দিন জানান, তাদের সবার জমি এক বিঘার নীচে। তারা কমলা চাষের উপর প্রশিক্ষন নিয়েছেন। বাড়ির আশেপাশে কমলার ১০/১২ টি করে গাছ লাগালে বাড়তি আয় হবে বলে তারা সবাই আশা করছেন। রায়পুরের নজরুল, জগন্নাথপুরের মোস-াক আলী, গিলাবাড়ির রজব আলী, মুজাবর্নীর রাসেল, ভাতগাঁয়ের পরিতোষ রায় কমলার বাগান করেছেন।

কমলা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যান উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, এই জেলায় বাগান ছাড়াও ৪ হাজার ১৪০ টি বসত বাড়িতে গড়ে ১২ টি করে ৪৯ হাজার ৬৮০ টি কমলার চারা বিতরন করা হয়েছে। এছাড়াও ২২৫ টি বাগানে ১৭০ টি করে গাছ রয়েছে ৩৮ হাজার ২৫০ টি।  প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কৃষককে। প্রকল্পের আওতায় নার্সারী তৈরি করা হয়েছে।

এই এলাকার তাপমাত্রা কমলা চাষের জন্য উপযোগী।  এই এলাকার কমলা মিষ্টি ও রসের পরিমানও বেশি। তাই বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হলে বানিজ্যিকভাবে ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে।

তানিয়া সরকার, ঠাকুরগাঁও

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here