ডেস্ক রিপোর্ট::  ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলি মহল্লাস্থ এ কে আজাদের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষের লিখিত ও স্বাক্ষরিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী। এ সময় অব্যাহতি পাওয়া ওই ১০ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ স্বাক্ষরিত একটি অব্যাহতিপত্র বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। যার মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কাদের আজাদসহ (এ কে আজাদ) জেলা আওয়ামী লীগের ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও হাস্যকর।

এতে আরও বলা হয়, প্রথমত ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কোনো পর্যায়ের কোনো সদস্যকে সরাসরি অব্যাহতি দিতে পারে না। কোনো সদস্য অপরাধ করলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারে। তারপর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অব্যাহতির জন্য শুধু সুপারিশ করতে পারে। এক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের সভা ব্যতিরেকেই এমন একটি অব্যাহতিপত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ। মূলত আমাদের প্রার্থী এ কে আজাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই এই অব্যাহতি পত্রটি প্রদান করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন বঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে, দলের যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবে তাতে দোষের কিছু হবে না। ফলে আওয়ামী লীগের নেত্রীবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোনো জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য কোথাও এমন অব্যাহতি প্রদানেরও কোনে নজির নাই।

লিখিত বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলা হয়, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বদিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এই অব্যাহতিপত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার পরিপন্থি বলেই প্রতীয়মান হয়।

ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী বলেন, আওয়ামী লীগ আইনের শাসন ও মানবাধিকারের স্বপক্ষে সবসময়ই সোচ্চার। অথচ, শামীম হক দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জেল থেকে বের করে ফরিদপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এসব সন্ত্রাসীদের উৎখাত করে সুন্দর একটি ফরিদপুর তৈরি করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ বলেন, গতকাল আমাদের বিশাল সমাবেশ দেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভীত হয়ে পড়েছেন। নিজেদের বিজয় নিয়ে তারা ভীত। এ জন্য তারা নিজেরাই নিজেদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়ে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ডিক্রির চর, কানাইপুরের ও ঈশান গোপালপুরের কয়েকটি জায়গা রয়েছে। গতকাল রাতে ঈশান গোপালপুরের আমাদের কয়েকটি ক্যাম্প তারা ভেঙ্গে দিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে ভোটার উপস্থিতি কম করার চেষ্টা করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, আমরা এখন ফরিদপুরে দুর্নীতির মহাসমুদ্রে বসবাস করছি। জনগণ ভোট দেবে সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। সদরের চন্ডিপুরে রুস্তম, রুস্তমের ছেলে লিটন ও বিষু এলাকার মহন্তপাড়ায় নৌকার পক্ষে ত্রাস সৃষ্টি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের পক্ষে কাজ করা ও ২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নির্বাচনী সভায় অনুপস্থিত থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ।

অব্যাহতি পাওয়া ওই ১০ নেতা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা, মনিরুল হাসান, আবুল বাতিন ও শহীদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে আজাদ, খলিফা কামাল উদ্দিন ও শাহ আলম মুকুল।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here