প্রধানমন্ত্রী শেস্টাফ রিপোর্টার :: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষজন আর আন্দোলন চায় না, তারা চায় দেশের উন্নয়ন। আর দেশের উন্নয়ন করতে হলে সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।

তিনি বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে খালেদা জিয়া জেলে গেছে। এখানে আওয়ামী লীগ বা সরকারের করার কিছু নেই। আমরা তাকে জেলে দেইনি। আদালত খালেদা জিয়াকে এতিমের অর্থ চুরির দায়ে কারাদণ্ড দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের মত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের এতো উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বলেই রুপপুরের মতো এত বড় এবং দু:সাধ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে দুর্নীতি আর জনগণের সম্পদ ও এতিমের টাকা লুটপাট করে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের কল্যাণে কাজ করে।

শনিবার বিকেলে পাবনা পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। এখন ৪ কোটি মেট্রিকট্রন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে। মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ডিম উৎপাদন বেড়েছে। লাউয়ের জন্য এখন আর শীতকালের অপেক্ষা করতে হয় না। সব সময় লাউ পাওয়া যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চিত্র তুলে ধরে বলেন, নৌকায় ভোট দেয়ায় আপনারা (পাবনাবাসী) এই উপহার পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ বা নৌকা ক্ষমতায় থাকলে চিরদিনই দেয় এবং দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ লুটপাট আর নিজেদের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় আসে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামীলীগ মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত দেশ গড়তে চায়। সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে।

এ সময় তিনি শিক্ষক অভিভাবকদের নিজ নিজ সন্তানদের খোঁজ-খবর রাখার আহ্বান জানিয়ে এবং মাদক ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সবার সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আপনাদের ছেলেমেয়ে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, এই ছেলে-মেয়েরা কার সাথে মেশে, কোথায় যায়, কিভাবে চলে? মাদকে তারা আসক্ত হলো কি না, জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলো কি না, তারা বিপথে চলে গেল কি না? অভিভাবক-শিক্ষকরা অবশ্যই আপনাদের তা দেখতে হবে।

জনসভায় উপস্থিত লোকজনের নিকট নৌকায় ভোট দেয়ার ওয়াদা নিয়ে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা যদি নৌকায় ভোট দেন, আর আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে, তাহলে প্রত্যেকটি গ্রাম নগরের ন্যায় গড়ে তোলা হবে। শহর বা নগরবাসী যে সকল সুযোগ সুবিধা পায় সেটা নিশ্চিত করবেন বলেও তিনি জানান। জনসভায় যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রী ৩১ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

পাবনা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু এমপির সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপির পরিচালনায় জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এমপি, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, দীপু মনি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এমপি, মকবুল হোসেন এমপি প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার আগে ঈশ্বরদী থেকে মাঝগ্রাম হয়ে পাবনা পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ, ট্রেন চলাচল, পাবনা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস, ঈশ্বরদী থানা ভবন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ, আটঘরিয়া উপজেলার মাঝপাড়া, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, সলিমপুর, লক্ষীকুন্ডা, সাঁড়া, পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর এবং চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ফরিদপুর উপজেলায় বড়াল নদীর ওপর সেতুসহ ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এ ছাড়া তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রে সিগন্যালিংসহ রেললাইন নির্মাণ, জেলা সদরে এক হাজার আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, পাবনা মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, সুজানগর উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আটঘরিয়া উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, চাটমোহর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভবন, বেড়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভবন, সুজানগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ভবন, জেলা রেজিস্ট্রার অফিস ভবন, পুলিশ লাইন্স মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবনসহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here