মো.সফিকুল আলম দোলন, জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড় ::

২০২২ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়সহ পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারীর সমতলের ৯টি নিবন্ধিত ও ২১টি অনিবন্ধিত চা বাগান এবং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিতসহ মোট ৮ হাজার ৩৫৫টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানের ১২ হাজার ৭৯ একর জমি থেকে মোট ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৯ হাজার ২২৬ কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে।যা জাতীয় চা উৎপাদনের ১৮ দশমিক ৯২ ভাগ। আর চট্টগ্রামকে পেছনে ফেলে এটি এখন চা উৎপাদনে দ্বিতীয় অঞ্চল।

উক্ত চা বাগানসমূহ থেকে ২০২২ সালে ৯ কোটি ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৩২ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলনের পর পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় চলমান ২৫টি চা কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে এই চা উৎপন্ন হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় চা আবাদি জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪৫ দশমিক ১২ একর। আর উৎপাদন বেড়েছে ৩২ লাখ ১৯ হাজার ২২৬ কেজি।যা আগের বছরের তুলনায় ২২
দশমিক ১৩ ভাগ বেশি। জেলা হিসেবে পঞ্চগড়েই চা আবাদ রয়েছে ১০ হাজার ২৪০ একর জমিতে। আর এ সকল জমি থেকে ২০২২ সালে উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ কেজি চা। এছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৪৫৭ দশমিক ২৯ একর, লালমনিরহাটে ২২২ দশমিক ৩৮ একর, দিনাজপুরে ৮৯ একর এবং নীলফামারীতে ৭০ দশমিক ৫৯ একর আবাদ
রয়েছে।এর আগে ২০২১ সালে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি এবং ২০২০ সালে ১ কোটি ৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল সমতলের এই চা অঞ্চলে।

চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের পর বিগত দুই বছর ধরে দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদন অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পঞ্চগড়সহ পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা। এক সময়ের পতিত গো-চারণ ভূমি এখন চায়ের সবুজ পাতায় ভরে উঠছে। আন্তর্জাতিক মানের চা উৎপাদন হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এ অঞ্চলের চা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। চা-বাগানের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠায় সৃষ্টি হয়েছে মানুষের কর্মসংস্থান। আগামী এপ্রিলেই পঞ্চগড়ে চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। পঞ্চগড়ে নিলাম বাজার চালু হলে চায়ের প্রকৃত বাজার পেতে চা চাষিদের আর কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।

বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল হক খোকন জানান, পঞ্চগড়ে প্রতি বছর চা চাষ ও
চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। চায়ের গুণগতমানও বৃদ্ধি পেয়েছে। পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপন করা হলে চা চাষিরা উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড়সহ পার্শববর্তী কয়েকটি জেলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ১৯৯৬ সালে সরবপ্রথম পঞ্চগড়ে চা চাষের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় এবং ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু হয়।

প্রতি বছর এ অঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী পঞ্চগড়সহ এই অঞ্চলে ১২ হাজার ৭৯ একর জমিতে। উৎপাদনের দিকেও প্রতি বছর এই অঞ্চলে চা উৎপাদনে রেকর্ড হচ্ছে। আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here