ডেস্ক রিপোর্ট::  ‘প্রতিদিন তো আর কাজ মেলে না। একদিন কাজ করলে অনেক সময় ২-৩ দিন বসে থাকতে হয়। ছেলেমেয়ের পড়ালেখা, খাবার খরচ সবকিছুর দাম বাড়ছে। প্রতিমাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা বাসা ভাড়া, ৭০০-৮০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল, পানি ও গ্যাসের বিল দিতে হয়। এই আয় দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্ট। দিবস তো বুঝি না। খাইতেছি নাকি না খেয়েই মরে যাচ্ছি কেউ সেই খবর তো রাখে না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ফেনী শহরের ট্রাংক রোড খেজুর চত্বরের ভাসমান হাটের পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রমিক বাবুল মিয়া।

বাবুল মিয়ার মতো আজ বুধবার (১ মে) মহান মে দিবসে ভোর থেকেই এ ভাসমান শ্রম বিক্রির হাটে জড়ো হয়েছেন অনেকেই। প্রতিদিন ভোর থেকে শত শত শ্রমিক ট্রাংক রোড এসে দাঁড়ায়। এরপর বাড়িওয়ালা, ঠিকাদাররা এসে চুক্তির মাধ্যমে কাজের জন্য নিয়ে যান তাদের। রাজমিস্ত্রী, ফসল কাটাসহ চুক্তিতে নানা রকমের কাজ করেন তারা। আর কাজ না পেলে রেলওয়ে স্টেশনেই বসে থাকতে হয় তাদের। শ্রমিক দিবসের এই দিনটিও তাদের কাছে অন্য দিনগুলোর মতোই বলে জানান তারা। তাই তো প্রতিদিনের মতো আজও কাজে যেতে দেখা গেছে তাদের।

জানা যায়, অন্যান্য জেলার তুলনায় ফেনীতে কাজ বেশি পাওয়া যায় বলে এই ভাসমান শ্রমিকের হাটে বছরের সবসময় শ্রমিকরা আসেন। তাদের বেশিরভাগই আসেন রংপুর, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও কুমিল্লাসহ অন্যান্য জেলা থেকে।

সাত বছর ধরে কাজের সন্ধানে ফেনী আসেন ভোলার মনপুরা এলাকার দিনমজুর সালাউদ্দিন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমাদের সবসময়ই কাজ করতে হয়। গরিব হওয়ার কারণেই তো এতো কষ্ট। পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। আমাদের কোনো দিবস নেই, কাজই দিবস। কাজ করলে পেটে ভাত জোটে। আর কাজ না করলে ভাত জোটে না।

শ্রমিক দিবসের ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে শাহআলম নামে এক শ্রমিক বলেন, কর্ম করেই খাইতে হয়, আমাদের আর কিসের ছুটি। এসব সরকারি লোকদের জন্য। আজকে কাজ করলে টাকা পাব, না করলে টাকা নেই। পরিবারের কথা চিন্তা করে আমাদের সব করতে হয়।

রাজ্জাক নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমরা একদিন কাজ করলে হয়তো সাতদিন কাজ থাকে না। আমাদের আর ছুটি কিসের। কষ্ট না করলে কে খাওয়াবে। আমাদের কোনো দিবস নেই। কাজ করলে আনন্দ-ফুর্তি আছে। আর কাজ না করলে কিছু নেই।

বাগেরহাট থেকে কাজের জন্য আসা মো. মিলন বলেন, পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান আছে। শ্রমিক দিবসেও কাজ করতে হয়। এখানে খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। রোদে অনেক কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে। অনেকে জমিতেই অসুস্থ হয়ে যায়। অনেক মালিক আছে একটু বিশ্রামও নিতে দেয় না। তারপরও পরিবারের জন্য কাজ করি।

শ্রমিক দিবসের কথা জানেন না এই ভাসমান হাটে আসা সামছুল হুদা। তিনি বলেন, সংসার কী আর এসব দিবস মানে। বাড়তি আয়ের জন্য নেত্রকোণা থেকে ফেনীতে আসি। কাজ পেলে মালিকের বাড়ি বা আশপাশের এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। কিন্তু গত পাঁচদিন গরমের কারণে কাজে যাইনি। রাতে স্টেশনে ঘুমাচ্ছি। খুব কষ্টে দিন পার করছি।

প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here