৪১ বছর পূর্বে, ১৯৭০ সালের এই দিনে ভয়াল কালো রাতে উপকূলীয় হাতিয়া, চর আবদুল্ল্যা, রামগতি, সন্দীপ, ঢালচর, চর জব্বার, তজুমুদ্দিন, চর কচ্ছপিয়া, চর পাতিলা, কুকরী কুমড়ী, মনপুরা, চরফ্যাশন, দৌলতখাঁন, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছাস তেড়ে আসে। তখন ছিল রমজান মাস। সরকারী হিসাবে প্রায় ৫ লক্ষ এবং বেসরকারী হিসাবে প্রায় ১০ লক্ষ আদম সন-ান স্রোতের টানে নদী-সমুদ্র গর্ভে-তীরে-ঢালে, ডালে-জলে-ঝোপে, চরে প্রাণ হারায়। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক থাবায় কোটি কোটি টাকার পশু, মৎস্য, ফসল, রাস-া, কালভার্ট, বাড়ী ঘর, স্কুল প্রতিষ্ঠান সম্পদ ধবংস হয়ে যায়। দেশী বিদেশী প্রচার মাধ্যমে এই ধবংসযজ্ঞের বর্ণনা ছিল ‘মানুষের মৃতদেহগুলি কচুরী পানার ঝপের মত সমুদ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে’।

৭০’র জলোচ্ছাসের ফলে উপকূলীয় জনপদে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভৌগলিক বন্ধনের বাঁধ ছিন্ন-ভিন্ন/লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়। ধবংসযজ্ঞের উপর দাড়িয়ে বেঁচে থাকা উপকূলীয় চরাঞ্চল স’ানীয়দের অসহায়ত্বসহ পূর্ব পাকিস-ানী জাতীয় রাজনৈতিক চৈতন্যবোধের ঝাকুনীতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস-ানী নির্লিপ্ত শাসক শোষকদের পিন্ডীর মসনদে আঘাত হানে। তখন উপকূলীয় এলাকায় জাতীয় পরিষদ নির্বাচন স’গিত হয়। লক্ষ মানুষের প্রাকৃতিক দূর্যোগে মৃত্যুর বিনিময়ে মুক্তির স্বাদ ও পথ রচনা হয়, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগমনি হাতছানির মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির সনদ ৬ দফা ও ছাত্রদের ১১ দফা পরিনত হলো বাংলাদেশ স্বাধীন করার এক দফার আপোষহীন দাবীতে, মাওলানা ভাসানীর ওয়ালাইকুমুস ছালামের মাধ্যমে। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ফলে স্বাধিকার আন্দোলন তথা সশস্‌্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো ২৬ মার্চ ’৭১।  টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে দেশ মুক্ত হলো।

সেই ৭০’র বিব্ধস্ত উপকূলীয় এলাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করতে হলে সকলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।  সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক কার্যক্রমকে সমন্বিত রূপরেখায় এনে তা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে বাস-বায়ন করতে হবে। ধনী গরীব বিভেদ সৃষ্টির বেড়াজাল ভেঙ্গে সাম্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই স্বনির্ভর জাতি হিসেবে প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই দুর্যোগ, দুর্বিপাকে আত্মত্যাগে বলিয়ান ১২ নভেম্বর বার-বার আর ধবংসের বার্তা নিয়ে আসবেনা, সৃষ্টির উম্মাদনা নিয়ে ধিরে ধিরে আসবে। আর সেই উম্মাদনার শক্তিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ প্রতিবার-প্রতি বছর।

এএইচএম নোমান, সেক্রেটারী জেনারেল, ডরপ।  

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here