রফিকুল আনোয়ার :: আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী নোয়াখালীতে। এক দুই জন নয় অন্তত দু’ডজন আওয়ামী লীগ নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন লাভে খায়েশ দেখিয়েছেন। এদের অনেকেরই যথেষ্ট জনপ্রিয়তা থাকলেও অন্তত দেড় ডজনের ওপরে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, যদি ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। অমুক নেতা-তমুক ভাই, জেলায় যার জুরি নাই, মুজিব কোর্ট গায়ে দিয়ে হাইব্রিড বাম্পার নেতা তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হাইব্রিডের সংজ্ঞা কি তা আমি জানি না। তবে গত দশ বছরে পূর্বে আওয়ামী লীগ করেননি, এমন যদি হাইব্রিডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে থাকেন, তাহলে অধিক সংখ্যক পাওয়া যাবে নোয়াখালীতে। ওবায়দুল কাদেরের জনসভায় গিয়ে চলতি মাসের ১৯ তারিখ নোয়াখালী জেলা স্কুল মাঠে মঞ্চে বাহারী বাহারী মুজিব কোর্ট দেখে নিজেই নিজের হিসাব মিলাতে পারছিলাম না।
এতো আওয়ামী লীগ নেতা নোয়াখালীতে! আসলে দলের দোষ কি ? মেঘনা-যমুনা-গঙ্গার পানি একাকার হয়ে যা হয়, তাই হয়েছে নোয়াখালী আওয়ামী রাজনীতির চলমান অবস্থা। শিবির নেতাকর্মিরাও পুলিশে টিকে যায় কিশের জোরে আমি না বললেও সবাই কি বুঝে না ? এসব বলতে মানা। বললে যাবে গণেশ উল্টে – যাবে গণেশ পাল্টে। তবুও কাউকে না কাউকে আসল কথাটি তো বলতে হয়। আসল নকল এই ব্যাখ্যায় না গিয়ে মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে আমার দুটি নিবেদন।
প্রথমটি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি জেলা পরিষদ নির্বাচন বয়কট করেছে। সুতরাং শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিী দল মাঠে নেই। পোস্টার ব্যানারে ছেঁয়ে যাওয়া নোয়াখালীর বাঘা বাঘা আওয়ামী লীগ নেতাদের মাতিয়ে রাখুন নির্বাচনী ময়দানে। দল কাউকে নির্দিষ্টভাবে সমর্থন না করে অন্তত নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচনটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিন।
এতে সাম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল প্রার্থী নির্বাচন করার সুযোগ পাবে এবং মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনপ্রিয়তা এবং যোগ্যতা যাচাই হয়ে যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হবেন না এমন অসংখ্য প্রার্থী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার খায়েশ দেখিয়েছেন। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, দল ক্ষমতায় আছে মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত এমনভাব থেকে অধিক সংখ্যক প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছেন। অথবা হতে পারে তারা নিজেদেরকে নোয়াখালীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণীয় ব্যক্তি হিসেবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ্য মনে করছেন। নির্বাচন যদি উন্মুক্ত হয় লাভ এতে কম না। সকল প্রার্থীর প্রচারণায় নতুন নতুন নেতাকর্মি তৈরি হবে। উপকৃত হবে দল।
ওবায়দুল কাদের আমার সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক গুরু। আমার বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, উনি মচকান তবে ভাঙেন না, উনি অধিক শুনেন, তবে বলেন কম। তিনি যা বলেন – সেটাই হয়ে নেতা-কর্মীদের জন্য বাধ্যতামুলক। ওনার বক্তব্যের সাথে তাল মিলিয়ে বলি, (অদুদের লাশ মওদুদ দেখিনি, দেখেছি আমি কাদের) চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছেড়ে দিন নির্বাচনী যুদ্ধের ময়দানে। দলীয় মনোনয়ন ট্রমা পেলে ক্রমা বেজার, কিংবা ‘ল’ পেলে ‘ষ’ রাগ। সুতরাং বেজার, রাগ কিংবা ক্ষোভের কারণ হওয়ার দরকার কি মাননীয় মন্ত্রী? ছেড়ে দিন না সকলকে খেলার মাঠে। তাহলে বুঝবেন কে আসল নেইমার আর মেসি!!
যেহেতু মাঠে নেই শক্ত প্রতিপক্ষ তাই ওবায়দুল কাদেরর উচিত হবে সকল প্রার্থীকে উম্মুক্ত করে দেয়া। প্রাপ্ত ভোটের হিসাব করেই নির্বাচন পরবর্তীতে হাইব্রিড নেতাদের চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাহলেই তিনি হাইব্রিড মুক্ত যে দল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়নের পথও উম্মুক্ত হবে।
লেখক পরিচিতি; সম্পাদক, নোয়াখালী প্রতিদিন। noakhalipratidin