m_a_muhitএবার চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০ লাখ করাদাতা রিটার্ন জমা পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের ১১ লাখ করদাতা আয়কর দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, করদাতারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, রিটার্ন দাখিল হয়রানি নয়। গত ৮ বছরে তরুণ প্রজম্মের আয়কর প্রদানে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ লাখ করদাতা তৈরির। এটি হলে তা হবে আমাদের জন্য গর্বের। কারন- এক সময় অনেকেই মনে করতেন কর দেওয়া মোটেই ভালো কাজ নয়। তারা মনে করতেন একবার যদি কর দেওয়া শুরু হয়, তাহলে সারাজীবন ভোগান্তি পোহাতে হবে। তবে এখন যারা কর দিচ্ছেন, তারা আশ্বস্ত হয়েছেন কর দেওয়া ভোগান্তিকর নয়।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের নির্মাণাধীন জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়কর সপ্তাহ ২০১৬’র উদ্বোধন ও সেরা করদাতা সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আমির হোসেন আমু এমপি। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ) আব্দুর রাজ্জাক।

এই অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডসহ ৫১৭ করদাতাকে ট্র্যাক্স কার্ড প্রদান করে এনবিআর। এবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১টি ট্যাক্স কার্ডসহ সারাদেশের মোট ৫১৭ জনকে ট্যাক্স দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৩৭০ জন সর্বোচ্চ করদাতা ও ১৪৭ জন দীর্ঘমেয়াদী করদাতা রয়েছেন। ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পক্ষে ট্যাক্স কার্ড গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসাইন খান। অনুষ্ঠানে অন্যানদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা সম্মাননা গ্রহণ করেন ব্যবসায়ী হাজী মো. কাউছ মিয়া, গাজী গোলাম দস্তগীর এমপি, বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রাণ গোপাল দত্ত, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, আইনজীবি কাজী মোহা. তানজীবুল আলম, স্থাপতি ইকবাল হাবীব, বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পক্ষে তার বোন, অভিনেতা পীযুষ ব্যানার্জ্জী, সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী ও শাহিন সামাদ, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে বলেন, এখন থেকে বছরের ৩০ নভেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস। করদাতাকে প্রতিবছর এই সময়ের মধ্যে কর দিতে হবে। দেশসেবা করতে মানুষ কর দিবে এটাই আমার প্রত্যাশা। ৯ বছর আগে বাজেটের আকার ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে আদায়ের জন্যই। আগামীতে ৫ লাখ কোটি টাকার বাজেট হবে। এজন্য তিনি করদাতাদের সমর্থন চান।

মুহিত বলেন, প্রথমবারের মতো ২৪ থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ করদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদানের এ বছর ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা সংশোধন করে পূর্বেও মাত্র ২০টির স্থলে ১৪১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কর বিভাগ সম্পর্কে জনগণের ধারণা আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে আয়কর মেলা, তৈরি হয়েছে করদাতা-বান্ধব পরিবেশ। আয়কর মেলার কারণে করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই এখন স্বেচ্ছায় আয়কর দিতে আসছেন। মেলার পরিবেশ আমরা সারাবছর ধরে রাখতে চাই। এছাড়া ব্যাপক সংস্কারমুখী ও সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, এ উদ্যোগ করদাতাদের মধ্যে কর পরিশোধ প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করবে। এর ফলে করদাতারা স্বচ্ছতার সঙ্গে সর্বোচ্চ কর পরিশোধে আগ্রহী হবেন। এটি সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমরা সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি অর্জনে অধিক সফল হয়েছি। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জনের পথে এগিয়ে চলছি। শিল্পায়নকে ঘিরেই আমাদের এ উন্নয়ন অভিযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে। একে সফল করতে হলে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমরা সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি অর্জনে অধিক সফল হয়েছি। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জনের পথে এগিয়ে চলছি। শিল্পায়নকে ঘিরেই আমাদের এ উন্নয়ন অভিযাত্রা পরিচালিত হচ্ছে। একে সফল করতে হলে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ তথা রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, দেশে এখন নিয়মিত আয়কর দেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। তারই আলোকে এবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১টি ট্যাক্স কার্ডসহ সারাদেশের মোট ৫১৭ জনকে সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৩৭০ জন সর্বোচ্চ করদাতা ও ১৪৭ জন দীর্ঘমেয়াদী করদাতা রয়েছেন। তিনি বলেন, এবার প্রথমবারের মতো আয়কর সপ্তাহ, ট্যাক্সকার্ডের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের অর্জন ধরে রাখতে চাই। এবারের কর মেলায় ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা গেছে করদাতাদের মধ্যে। এনবিআরের তিনটি বিভাগই করদাতাদের সঙ্গে বন্ধুত্বস্থাপনের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ করছে। আমাদের পাশাপাশি করদাতাদেরও সহায়তা দরকার। তিনি বলেন, আমরা করবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন রাজস্ব প্রয়োজন। সে রাজস্ব আহরণে এনবিআর সৎ করদাতাদের প্রণোদনা দিতে ট্যাক্সকার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি ও কার্ড প্রানের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বৈচিত্র্য আনা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here