আপনারা আন্দোলন করেন, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তি এক জায়গায় সেটা হলো আমরা যারা সাধারন মানুষ তারা কেন মরবো? ক্ষমতায় যাবেন আপনারা, হালুয়া রুটি খাবেন আপনারা, আর লাশ হবো আমরা!

মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন!রবীন্দ্র নাথ পাল ::

গত ৪২দিন যাবৎ বিরোধীজোটের টানা অবরোধ ও হরতাল নিহত হয়েছেন ৮৯জন। এরমধ্যে আগুনে পুঁড়ে মারা গেছেন ৫২জন। ঢাকায় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন ১২৬ জন। গাড়ী ভাংচুর সহ আগুন দেয়া হয়েছে ১১২০ টি। এমন জটিল পরিস্থিতিতে বিরোধী জোট শর্ত দিয়েছে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ঘোষনা দিলে অবরোধও হরতাল প্রত্যাহার করে সংলাপে বসবে।

এখন প্রশ্ন হলো শর্ত দিয়ে সংলাপ হবে কিভাবে? অর্থাৎ বিচার মানি তালগাছ আমার! সরকার বলছে, খুনীদের সাথে কোন সংলাপ নয়। আগুনে পুঁড়িয়ে যেভাবে নিরিহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে শতশত লোক। এরপর বিরোধীজোটের বোধহয় হলো সংলাপে যাবে শর্ত সাপেক্ষে।

বিরোধীজোটের অবরোধ ও হরতাল এত দীর্ঘদিন চলায় তা আর কাজে আসছে না। জনগনের যদি সমর্থন থাকতো,তবে এ হরতাল অবরোধে সরকারের আরো আগেই পতন হতো। কারন গুলী করে কোন গন আন্দোলন থামানো যায় না। তাহলে সারা পৃথিবীজুড়ে স্বৈরশাসকরা অস্ত্র দিয়ে দেশশাসন করতো। যে আন্দোলনে জনগনের সমর্থন নেই, সেই আন্দোলন কোনদিন যৌক্তিক পরিনতি পায়নি, পাবেও না। আর যে আন্দোলনে জনগনের সম্পৃক্ততা থাকে, সে আন্দোলন গুলী বোমা পেশী শক্তি দিয়ে দমানো যায়না।

এ প্রসঙ্গে ভারতের প্রখ্যাত নক্সালনেতা চারু মজুমদারের একটি প্রনিধান যোগ্য বানী হচ্ছে। শাসক গোষ্ঠীর রাইফেলের গুলী ফুরিয়ে যাবে, দেশের জনগন শেষ হবে না। সম্প্রতি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সংলাপ নিয়ে মাথাকুটে মরছেন। কিন্তু তাদের কথা সরকার শুনতে রাজী নয়। প্রধানমন্ত্রী পরিস্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন খুনীদের সাথে কোন সংলাপ নয়। অথচ বিরোধীরা শর্ত দিয়েছে আগে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ঘোষনা দিলেই শুধু সংলাপ হতে পারে।

বেশ কিছুদিন আগে আমি এক কলামে লিখেছিলাম অহিংস আন্দোলন যেন সহিংস না হয়। অথচ আন্দোলনের নামে সংহিসতায় এমন নৃশংসতা ও পৈচাশিক উন্মাদনা আরম্ভ হলো, যা দেখে দেশের জনগন ভীত হয়ে উঠলো। এরা ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে তার গ্যারান্টি কি?

সম্প্রতি যে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে মুখ্য ভুমিকা রাখছে জামায়াত। চোরাগোপ্তা পেট্রল বোমার কারিগরই তারা। চোরাগোপ্তা হামলা করে সরকার পতনের অলীক স্বপ্নে বিভোর বিএনপি-জামায়াত জোট যদি মনে করে তাদের এ আন্দোলনে সরকার সংলাপে বসবে, সেটা নেহায়েত বোকামী ছাড়া কিছুই না। বর্তমান আন্তর্জাতিক পেক্ষাপট বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষে আছে, সাস্প্রতিক ঘটনাবলীতে তা প্রমান করে না। বাংলাদেশে জঙ্গী শাসন আসুক ভারত তা কোনভাবেই চাইবে না।

এখানে রয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ। এটা স্পষ্ট হয়েছে নির্বাচনে জেতার পর মোদী সরকারের হাসিনা সরকারের সাথে একসাথে কাজকরার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। সুতরাং সরকারের গদী আপাতত যে উল্টে যাচ্ছে না এটাই সত্য।

গত ২৭ জানুয়ারী ৩দিনের সফরে ভারতে এসেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ভারত সফরে ওবামা-মোদী বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপরই আমেরিকার বাংলাদেশে রাষ্ট্রদুত বার্নিকাট বাংলাদেশে আসেন, দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরনের সঙ্গে। ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর বাংলাদেশে

সফরে আসছেন। এরআগেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় আসছেন বাংলাদেশে। এশিয়ার পরাক্রমশালী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী মার্চে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসবেন। এসব কিছুর আলামত বর্তমান সরকারের পক্ষে যাচ্ছে বলেই অনুমান করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত ৫ জানুয়ারী বিএনপি’র সমাবেশে সরকার বাধা দেয়ার পর থেকেই লাগাতার অবরোধ ও হরতাল দিয়ে বিরোধী জোটের অর্জনের মধ্য দিয়ে আছে শুধু গাড়ীতে আগুন দিয়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যা। আপনার সরজমিনে এসে দেখে যান মফস্বল শহরে আপনাদের দেয়া হরতালে অবাধে যানবাহন চলছে। দোকানপাট খোলা আছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। আপনারা শুধু যানবাহনে পেট্রোল বোমা, আগুন বন্ধ করে দিন, দেখবেন জীবনযাত্রা কত দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। আপনারা যদি মনে করেন জনগন আপনাদের আন্দোলনের স্বপক্ষে আছে-তাহলে হরতাল অবরোধে মফস্বল এলাকার চেহারাটা একবার দেখে যান।

এদেশে অনেক গন আন্দোলন হয়েছে। আপনারাও সে আন্দোলন করেছেন। এভাবে বাসে ট্রেনে আগুন দিয়ে নিরিহ মানুষ হত্যা কখনো হযেছে কি? ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বোবা প্রানী ১৪ হাজার মুরগীকে আগুনে পুঁড়িয়ে আপনার দলের কর্মীরা কিভাবে মেরেছে? আশ্চর্য্য বোবা প্রানী মুরগীর সাথে আন্দোলনের কি সম্পর্ক আছে? এসব করে যদি ক্ষমতায় যাওয়া যেত তবে সন্ত্রাসীরাই ক্ষমতায় থাকতো! কোন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন হতো না। গন আন্দোলনের নামে গাড়ীতে পেট্রোল বোমা মেরে নিরিহ মানুষ হত্যা যদি গনতন্ত্রের আন্দোলন হয়, তাহলে মাফিয়ারাই দেশের ক্ষমতায় থাকতো।

আপনারা আন্দোলন করেন, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তি এক জায়গায় সেটা হলো আমরা যারা সাধারন মানুষ তারা কেন মরবো? ক্ষমতায় যাবেন আপনারা, হালুয়া রুটি খাবেন আপনারা, আর লাশ হবো আমরা! আপনাদের আন্দোলনে যদি জন সমর্থন থাকতো, তবে এতদিনে এ সরকারের পায়ের তলায় মাটি থাকতো না। সাধারন মানুষ হত্যা করে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন যদি দেখে থাকেন, তবে জনগনের উপর আস্থা রাখার প্রয়োজন নেই। আর জনগনের উপর আস্থা থাকে, যদি সকল ক্ষমতার উৎস হয় দেশের জনগন, তাহলে অপেক্ষা করুন। তার বড় প্রমান দিল্লীর আম আদমির কেজরিওয়াল। জনগন যখন দেবে, তখন আঁচল ভরে দিবে। রাখার জায়গা থাকবে না।

দীর্ঘ ৪২দিন যাবৎ সাধারন জনগনকে জিম্মী করে আন্দোলন করছেন, তাতে আখেরে লাভ-লোকসানটা একবার ভেবে দেখবেন। তা না হলে আম ছালা দুটোই চলে যাবে।

১৭/২/১৫।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, মোবাইল-০১৭১৩৮১৯২৯৪

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here