পরিবহন শ্রমিকমো: আব্দুল্লাহ :: গত কয়েক দিনে পরিবহন শ্রমিকদের হাতে দুজন মানুষ নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ঘটনা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব বেশি আলোচিত হয়েছে। একটি ঢাকা-নারায়গঞ্জ লিংক রোডে দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় ট্র্যাফিক পুলিশের এটি এএসআই আবুল কালাম আজাদ নিহত হন। কাভার্ড ভ্যানটি রং-রুটে আসছিল, সেটিকে থামাতে গেলে চালক ইচ্ছাকৃতভাবে আজাদকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

অন্যটি বহুল আলোচিত সাইদুর রহমান পায়েল হত্যাকাণ্ড। বাথরুম পেয়েছে বলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় বাস থেকে নেমেছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পায়েল। এরমধ্যেই যানজট কিছুটা ছাড়লে চলন্ত বাসে উঠতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা লেগে পড়ে যায় সে। বাসের চালক, সুপারভাইসার ও সহকারী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও অন্যান্য ঝামেলা এড়িয়ে যেতে একটি সেতু থেকে ফেলে হত্যা করে।

এই দুটি ঘটনা কে কোনভাবেই দুর্ঘটনা বলা যায় না, পরিবহণ শ্রমিকরা ইচ্ছা করেই দুজন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, পরিবহণ শ্রমিকরা এত নৃশংস হওয়ার সাহস পাচ্ছে কোথা থেকে? তাদের কি আইনের বা শাস্তি পাওয়ার কোনই ভয় নেই? আসলে এর পেছনে কিছু কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে, যা আমাদের বিচারিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি দ্বারাই তৈরি।

এর মধ্যে একটি বড় কারণ হলো বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা। আমাদের দেশের বিচার ব্যাবস্থায় কোন একটি মামলা নিষ্পত্তি হতে ও কোন অপরাধী সাজা পেতে বছরের বছরের পর বছর কেটে যায়, যাতে আপরাধী ও ভুক্তভুগির পরিবার সবাই ঘটনার কথা ভুলেই যায়। বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শাস্তি পাওয়ার ভয় অপরাধ করতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না।

আর বিচারের এই দীর্ঘসূত্রিতা পার হয়েও যদি আদালত কোন পরিবহণ শ্রমিককে শাস্তি দেয়, তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবহণ শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তারা ধর্মঘট ডাক দিয়ে আদালত ও দেশকে জিম্মি করে ফেলতে চায়।

বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার সাথে এসকল নৃশংসতাকে উৎসাহিত করার পিছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখে রাজনৈতিক প্রশ্রয়। আমাদের দেশের ভোটের ও সহিংসতার রাজনীতিতে পরিবহণ শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠন গুলোর বাড্ড কদর। তাইতো পরিবহণ শ্রমিকদের কে দেওয়া প্রতিটি শাস্তির বিরুদ্ধে আমাদের একজন মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে রাস্তায় নেমে যেতে দেখি।

আর এই রাজনৈতিক কদরের কারণেই হয়তো, বাস দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র রাজিবের মৃত্যুর পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে বলেছেন যাত্রীদের দোষেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যেখানে রাজিবের মৃত্যু স্পষ্টতই দুই বাস চালকের মধ্যকার অহেতুক প্রতিযোগিতার কারণেই হয়েছিল, সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন দাবি পরিবহণ শ্রমিকদের রাজনৈতিক প্রশ্রয় ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে।

আর এসব কারণেই আমাদের দেশের পরিবহণ শ্রমিকরা ভেবেই নিয়েছে তারা যাই করুক না কেন, তাদের কিছুই হবে না। এদেশের আদালতও তাদের শাস্তি দিতে পারবে না। এসবই তাদের এত বেশি সহিংস ও নৃশংস হতে উৎসাহিত করছে।

পরিশেষে সেই মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ও পরিবহণ শ্রমিক নেতাদের কে কিছু প্রশ্ন করতে করছে, পায়েল আর আজাদের খুনিদের কি শাস্তি দিলে আপনারা মেনে নিবেন? কিংবা তাদের ফাঁসির বা আমৃত্যু কারাদণ্ড হলে কি খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, তার প্রতীবাদে আপনারা রাস্তায় নেমে আসবেন? পরিবহণ ধর্মঘটের নামে দেশকে আদালতকে জিম্মি করে শাস্তি দেওয়া ঠেকাবেন?

 

 

লেখক: উন্নয়ন কর্মী। ইমেইল: abdullahdupacs@gmail.com

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here