রুদ্র অয়ন
রুদ্র অয়ন :: দেশ জাতি তথা গোটা বিশ্ব এক বিশেষ বিপদকাল অতিক্রম করছে। বাংলাদেশ সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে ৫ দিনের, স্বাধীনতা দিবসের ছুটি, শুক্র শনিবার মিলিয়ে মোট ১০ দিনের বিরতি।
রাস্তা ফাঁকা,ধু ধু করছে। একটা মানুষও নেই। গ্যাসের ওষুধ আমার আমার নিত্য দিনের সঙ্গী! ওষুধ কিনতে বের হয়েছি।
হাঁটতে হাঁটতে মোড়ে এসে মনটা আরও খারাপ। এখানে যে শূন্যতা, তার হাহাকার বুকের ভেতর খামছে ধরছে। করোনার থাবা একি করেছে আমাদের! গোটা একটা দেশ, একটা জাতিকে আত্মরক্ষার শৃঙ্খলে আটকে ফেলতে চেয়েছে। সবাইকে ঘরে বসে অপেক্ষা করতে হবে, কখন দুঃসময় কাটবে! করোনা নামক বর্গির ভয় কখন কাটবে এই অপেক্ষা।
মনে পড়ে গেল সেই চিরন্তন ছড়া:
‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এল দেশে…’
সেই দুরাবস্থার বাস্তবতা যেন পুরো দেশ, পুরো বিশ্ব’র বুকে। জনমানবহীন নগরের রাস্তাগুলো। করোনার ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে সবাই ঠাঁই নিয়েছে ঘরের ভেতরে। এ যেন—
থমথমে জনজীবন
জনমানবহীন জনপদ
করোনা এল দেশে…
মোড়ের দোকানটা বন্ধ। যেতে হবে বাজারের দিকে ওষুধের দোকানে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা এসে হাজির। ভাবলাম সুযোগ নেবে। দ্বিগুণ তিন গুণ ভাড়া তো নেবেই। কিন্তু রিকশাচালক যৌক্তিক ভাড়াই চাইলেন। আমার যেমন রিকশা দরকার, তারও দরকার যাত্রী। ফসকে গেলে তারও বিপদ। চাল কেনার তাড়া আছে। কথায় কথায় এটাই জানালেন।
 যেতে যেতে চিরচেনা নগরটাকে কেমন অচেনা মনে হলো। কিছুদিন আগেও জ্যামে বসে বসে বিরক্ত হয়েছি। অজান্তেই খেদ ঝেড়েছি, এখানে মানুষ থাকে!
অথচ সেই ব্যস্ত নগরীর এই ফাঁকা রাস্তাটাকে এখন বড় অসহ্য লাগছে। এই শূন্যতার মধ্যে রয়েছে অনেক মানুষের ঘরবন্দী জীবনের দীর্ঘশ্বাস। আতঙ্কের লুকোনো হাহাকার। গতকাল সন্ধ্যা লগ্নে মুদি দোকানে সওদা নিতে বেরিয়ে দেখি অনেক দোকানই বন্ধ। দু-চারটা যাও বা খোলা ছিল, লোকজনের বেজায় ভিড়। স্যানিটাইজারসহ নিত্যপণ্য কেনার ধুম চলছে। এক দোকানি বললেন, ‘যতক্ষণ মাল আছে, কাউকে নিরাশ করব না। মুশকিল হবে সাপ্লাই ঠিকমতো না পেলে।’
এক ক্রেতা বেশ খেদ প্রকাশ করলেন। বললেন, ‘এই সব হইল গজব। লোকজন যা অনাচার শুরু করছিল। ধর্ষণ আর ধর্ষণ। এখন বোঝো!’ আরেক ক্রেতা মজুরদারের একচোট বকে নিজেই বেশ কিছু জিনিস আগাম কিনে নিলেন।
করোনাভাইরাস বর্গী বা লুটেরা ডাকাতের মতো ঝটিকা ত্রাস নয়, একটা গোটা দেশ, বলা যায় বিশ্বজুড়ে মূর্তিমান আতঙ্ক।
করোনা ঠেকাতে মানুষ যা পাচ্ছে, তা ই খাচ্ছে। যে যা বলছে, তা ই শুনছে। এর মধ্যে কিছু মানুষ আবার থানকুনিপাতা ঝাড়েবংশে নির্বংশ করতে নেমেছে!  তুলসীপাতারও গুষ্টি উদ্ধার হয়েছে। তাদের কিছু বলে যে ভৎসনা করবেন, সে সুযোগ কোথায়?
খোদ আমেরিকাতেও চলছে এমন তাণ্ডব। সেখানে এখন আমিষ বাদ দিয়ে শাকসবজি আর পাতা খাওয়ার ধুম পড়ে গেছে। রেস্তোরাঁয় এখন স্নোবল টারনিপ নামের একধরনের শালগমের শাকের বেশ চাহিদা। এর মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন করোনাকবলিত জনতাকে রক্ষায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ অনুমোদন করেছে।
আমাদের যে কী হবে, প্রশাসন আর সরকারই জানে। খেটে খাওয়া মানুষের অনেকেই এরই মধ্যে কাজ হারিয়ে বেকার। বিশেষ করে যারা রোজকার মজুরি খাটেন, রিকশা স্কুটার চালান,ফুটপাতে বসে ব্যবসা করেন, ট্রাক-বাসের চালক ও সহকারীরাও বেকার। দোকানপাটের কর্মীদেরও একই অবস্থা। সব মিলিয়ে গোটা দেশে আয়-রোজগারের একটা জটাজাল তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে এসব মানুষের জন্যও একটা প্যাকেজ দরকার। এসব দিকেও সরকারের সুদৃষ্টি পড়বে বলে প্রত্যাশা করি।
মনে পড়ে গেল সেই ছড়া-
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
ক্ষয়ক্ষতির পাহাড় জমলে তখন বুলবুলি পাখিটা হয়ে যাবে করোনা ভাইরাস।
পোশাক খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী মোটা অঙ্কের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। অন্যান্য খাতের দিকেও সরকারের সুদৃষ্টি পড়বে বলে আশা করি।
প্রতিদিনের মত সুর্যোদয়
আমার হৃদয়ের আঙিনায়
আলো ছড়ায় না আর! কি এক সময় পেলাম! থমকে গেছে প্রাণের উচ্ছ্বাস আনন্দ! মানুষের হাসিখুশি মুখটাও দেখিনা খুব একটা! সাত পাঁচ ভাবনার দোলায় ওষুধ নিয়ে এক সময় বাসায় ফিরলাম।
করোনা প্রতিরোধে নিয়ম মেনে চলা অত্যাবশ্যক। আতঙ্ক নয় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ঘুচে যাক এ মহামারীময় অমানিশার আঁধার। উদিত হোক  মহামারীমুক্ত নতুন দিনের নতুন সূর্য।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে, সকল ধর্মের সকল মানুষকে নিরাপদ রাখুন, সুস্থ রাখুন, ভাল রাখুন। সকল মহামারী থেকে বালা-মুসিবত থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। ভাল থাকুক পৃথিবী, ভাল থাকুক বাংলাদেশ।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here