ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির রায় আগামী ৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতের (পিসিএ) সঙ্গে যোগাযোগ করে এই তথ্য জানা গেছে।  সালিসি আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেওয়া একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘আগামী ৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের রায় প্রকাশ করা হবে। খবরটি দিয়েছে কানাডাভিত্তিক বাংলা অনলাইন নতুন দেশ ডটকম।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আট দিনব্যাপী শুনানি হয়। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে রায় ঘোষণার কথা জানান। সেই হিসাবে গত ২ জুলাই রায় হওয়ার কথা ছিল।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বিরোধটি নিষ্পত্তির জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করে বাংলাদেশ। রুডিগার ওলফ্রামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারের বক্তব্য শোনেন। ট্রাইব্যুনালের একটি প্রতিনিধিদল বিরোধপূর্ণ এলাকাও পরিদর্শন করে।

ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে দায়ের করা আবেদনে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে রদবদল হলেও তিনিই এখনো এই মামলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি। প্রতিটি শুনানিতে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এমনকি ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ শুনানিতে তিনিই সরকারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সে সময় অবশ্য নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দেন। এই সালিসি আবেদনে দীপু মনির পরেই  রয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলম।

সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে এই সালিসিতে বাংলাদেশের পক্ষে খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিনিধিত্ব করলেও ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং আইন উপদেষ্টা নিরু চাদা। আর তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একই মন্ত্রণালয়ের আরেক যুগ্ম সচিব হর্ষবর্ধন সিংলা ও পরিচালক পুনিত আগরওয়াল। প্রটোকলের বিবেচনায় ভারতীয় পক্ষের যুগ্ম সচিবের বিপরীতে বাংলাদেশের খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে এই সালিসিতে প্রতিনিধিত্ব করেন।

সালিসিতে বাংলাদেশের বক্তব্য যথাযথভাবে উপস্থাপন করার জন্য বিদেশি আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ দেওয়া হয়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে ঢাকায় আসা কানাডীয়ান আইনজীবী পায়াম আখাভান এই প্যানেল রয়েছেন। প্যানেলে আরো আছেন মার্কিন আইনজীবী লরেন্স মার্টিন ও পল এস রেইসলার, ব্রিটিশ আইনজীবী অধ্যাপক জেমস ক্রফোর্ড, অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডস ও অধ্যাপক অ্যালান বোয়েল। ভারত সরকার একজন ব্রিটিশ, একজন ফরাসি আইনজীবীর সঙ্গে একজন ভারতীয় আইনজীবীকেও নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশি প্যানেলে অবশ্য কোনো বাংলাদেশি আইনজীবী নেই।

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে আট দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলার শুনানি হয়। শুনানির ছয় মাসের মধ্যে রায় ঘোষণার কথা জানায় পিসিএ (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন)। দুই দেশের জলসীমা শুরু হবে কোত্থেকে, সেটাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধের মূল বিষয়। এ ছাড়া, ভূমিরেখার মূল বিন্দু থেকে সমুদ্রে রেখা টানার পদ্ধতি নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে । পিসিএ দুই দেশের উপস্থাপিত যুক্তিতর্ক বিবেচনা করে রায় প্রকাশ করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here