চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক এনামুল হক৷ একাত্তরে যুদ্ধের শেষের দিকে আহত হন তিনি৷ এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যাশা একটাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে চান তিনি৷

বৈষম্য, মুক্তিযুদ্ধ

বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের বৈষম্য সহ্য করতে পারতেন না এনামুল হক৷ শিক্ষাজীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ একাত্তরের মার্চ মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল আন্দোলনে নিজেকে সঁপে দেন তিনি৷ এরপর আসল সেই কালোরাত৷ এনামুল তখন চাঁপাইনবাবগঞ্জে৷ ডয়চে ভেলের কাছে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এভাবে, ‘‘মাতৃভূমির মুক্তির জন্য, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করা একান্ত দরকার৷ এই চিন্তাভাবনা থেকেই আমি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম”৷

ভারতে প্রশিক্ষণ

এপ্রিল নাগাদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের দখল নিয়ে নেয় পাকিস্তানি হানাদাররা৷ সুসজ্জিত পাক বাহিনীকে রুখে দেয়ার মত অস্ত্রশস্ত্র তখন মুক্তিবাহিনীর কাছে ছিল না৷ এনামুলরা তখন চলে যান ভারতে৷ সেখানে গিয়ে আবারো সংগঠিত হন তারা৷ জুন মাসে শিলিগুড়িতে অস্ত্র এবং গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এনামুল৷ তিনি বলেন, ‘‘জুন মাসে আমরা শিলিগুড়িতে নিয়মিত প্রশিক্ষণে চলে যাই৷ সেখানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালনা এবং গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা আবারো দেশে ফিরে আসি”৷http://en.wikipedia.org/wiki/File:BDP.jpg

A Selection of Pamphlets on Bangladesh's Independence Movement. In the fast breaking events of 1971-1972, in which a movement for independence exploded in what was then West Pakistan, the Pakistan authorities attempted to suppress the movement by military force. When India moved in to settle the issue, the Library's New Delhi Field Office was able to get pamphlets from all parties putting forward their positions. As is true for collections of pamphlets on many other subjects that would not each merit individual cataloging, these items have been preserved and cataloged as a collection so that future scholars may study the events and propaganda battle. (Southern Asian Pamphlet Collection, Asian Division)Bildunterschrift: মুক্তিযুদ্ধের কিছু দলিল-পত্র

সংগঠিত প্রতিরোধ

প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে দখলদার পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এনামুল৷ বিভিন্ন স্থানে হানাদারদের উপর অর্তকিত হামলা চালিয়ে সফলতা অর্জন করেন তিনি৷ এরকমই এক লড়াইয়ে গুরুতর আহত হন তিনি৷ পিঠে গুলি লাগে তাঁর৷ এনামুল বলেন, ‘‘কলাবাড়িতে পাকবাহিনীর খুব কাছাকাছি অবস্থান করছিলাম আমরা৷ আমি ছিলাম কমান্ডার৷ আলো-আঁধারি রাত ছিল৷ পাক বাহিনী আমাকে দেখে ফেলে এবং গুলি করে৷ আমার পিঠে দু’টি গুলি লাগে৷ এরপর ১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে আমি আবারো যুদ্ধের ময়দানে ফিরে আসি”৷খবর : ডয়েচেভেলে

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

একাত্তরের ডিসেম্বরে স্বল্পসময়ের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সঙ্গ পেয়েছিলেন এনামুল হক৷ তিনি বলেন, ‘‘জাহাঙ্গীর অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন৷ একজন সেনা অফিসার, যিনি পাকিস্তান থেকে চলে এসেছিলেন দেশমাতাকে মুক্ত করার জন্য৷ তিনি ছিলেন দরদী এক মানুষ”৷

১৪ই ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের চূড়ান্ত অপারেশনে শহীদ হন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ পরেরদিন জাহাঙ্গীরের মরদেহ উদ্ধার করেন এনামুলরা৷

অর্থনৈতিক মুক্তি মেলেনি

১৫ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷ স্বাধীন বাংলাদেশে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এনামুল হক৷ একাত্তরের এই বীর সেনা মনে করেন, দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক আশা এখনো পুরণ হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি৷ কিন্তু যে চেতনায়, যে উদ্দেশ্যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে৷ সেই চেতনা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি৷ তার মানে হচ্ছে বাঙালির প্রতিটি ঘরে মুক্তির স্বাদ এখনো পৌঁছায়নি৷ অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো মুখ থুবড়ে আছে”৷

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে র্বতমান সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এনামুল হক৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে, এমন প্রত্যাশাই করেছেন তিনি৷

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here