স্টাফ রিপোর্টার :: রংপুর শহরের ৯৬ ভাগ সরকারি অফিসে সরকারের ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন- ২০০৫ (সংশোধিত আইন-২০১৩)’ লঙ্ঘিত হচ্ছে। এছাড়া ৯৯ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৯১ ভাগ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এবং ৯৬ ভাগ রেস্টুরেন্টে দেদারছে লঙ্ঘিত হচ্ছে এই আইন (এখানে আইন লঙ্ঘন বলতে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে অথবা আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি)।

রবিবার (১৫ মার্চ) সকালে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘রংপুর শহরের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রতিপালনের বর্তমান অবস্থা যাচাই’ শীর্ষক এক জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুুষ্ঠিত হয়।

উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে রংপুরে এই চার ধরনের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ভয়াবহ এ চিত্র তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- ২০১৯ সালের জুন-সেপ্টেম্বর ‘এসিডি’র তত্ত্বাবধানে ‘রংপুর শহরের পাবলিক প্লেসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা’ যাচাইয়ের জন্য ‘ক্রস সেকশনাল’ পদ্ধতিতে জরিপটি পরিচালিত হয়। রংপুর শহরের মোট ৮১২টি পাবলিক প্লেসে (১৫৬টি সরকারি অফিস, ১০৮টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ১২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৪২১টি রেস্টুরেন্টে) পরিচালিত হয় এই জরিপ।

রংপুরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন- বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাম্মেল হক। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এসিডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোস্তফা কামাল।

সংবাদ সম্মেলনে ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্‌স-সিটিএফকে’র প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান মাসুদ, এসিডির এডভোকেসি অফিসার আনোয়রুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অফিসার তৌফিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরেন- ‘এসিডি’র মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুল। নিম্নে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হলো।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী- ৮০ভাগ সরকারি অফিসে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, ৮৯ভাগ অফিসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ২৭ভাগ সরকারি অফিসে সরাসরি ধূমপান, ৮০ভাগ অফিসে সিগারেট/বিড়ির বাট এবং ১ভাগ সরকারি অফিসে সিগারেট/বিড়ির গন্ধ পাওয়া গেছে। ২ভাগ সরকারি অফিসে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে এবং ৩ভাগ অফিসে সীমানার মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। ৭১ভাগ অফিসের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। এছাড়া ৫০ভাগ সরকারি অফিসে পানের পিক পাওয়া গেছে।

জরিপে দেখানো হয়- ৩৯ভাগ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের ভবনের ভেতরে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, ৮৪ভাগ কেন্দ্রে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ১৬ভাগ কেন্দ্রে ভবনের বাহিরে কিন্তু সীমানার মধ্যে ধূমপান করতে দেখা গেছে। ১৫ভাগ কেন্দ্রে সরাসরি ধূমপান, ৩১ভাগ-তে সিগারেট/বিড়ির বাট এবং ১২ভাগ সেবাকেন্দ্রে সিগারেটের গন্ধ এবং ২ভাগ কেন্দ্রে ছাইদানি পাওয়া গেছে। ৫ভাগ সেবাকেন্দ্রে ভবনের ভেতরে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র, ৬ভাগ কেন্দ্রে ভবনের বাহিরে কিন্তু সীমানার মধ্যে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্র এবং ৪২ভাগ স্বাস’্যসেবা কেন্দ্রের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে। এছাড়া ৩৬ভাগ সেবাকেন্দ্রে পানের পিক পাওয়া গেছে।

জরিপের প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে- ৭২ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, ৯৬ভাগ প্রতিষ্ঠানে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ৭ভাগ প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ধূমপান, ৭২ভাগ প্রতিষ্ঠানে সিগারেট/বিড়ির বাট পাওয়া গেছে। ৭৯ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র পাওয়া গেছে।
জরিপকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ধূমপানের নিদর্শনের চিত্রে দেখা গেছে- ৭৭ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়/ কিন্ডারগার্টেনে; ৮১ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে; ৭৮ভাগ কলেজে এবং ২৩ভাগ মাদ্রাসায় ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়/কিন্ডারগার্টেনে, কলেজে এবং মাদ্রাসায় ধূমপানমুক্ত কোনো সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। তবে ১৬ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া গেছে। এছাড়া ৫৯ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানের পিক পাওয়া গেছে।

এছাড়া জরিপে দেখানো হয়- ৮০ভাগ রেস্টুরেন্টে ধূমপানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, ৯৩ভাগ রেস্টুরেন্টে আইন অনুযায়ী সতর্কতামূলক নোটিশ পাওয়া যায়নি। ৪৪ভাগ রেস্টুরেন্টে সরাসরি ধূমপান, ৭৯ভাগ রেস্টুরেন্টে সিগারেট/বিড়ির বাট বা ছাইদানি এবং ৩ভাগ এ ধূমপানের গন্ধ পাওয়া গেছে। ২৮ভাগ রেস্টুরেন্টে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও ১২ভাগ রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া ৫৬ভাগ রেস্টুরেন্টে পানের পিক পাওয়া গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here