৬দিনেও সন্ধান মেলেনি ২ পর্যটকের: স্বজনরা বান্দরবানেএনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান প্রতিনিধি :: অপহরণের ৬দিন পরও সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় আটক ২ পর্যটক এবং ২জন স্থানীয় গাইডকে (পথপ্রদর্শক) উদ্ধার করা যায়নি। তবে অপহৃতরা সীমান্তের ওপারে জীবিত অবস্থায় আটক আছেন বলে বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া সংবাদে নিশ্চিত হয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় পাহাড়ি নেতারা।

শুক্রবার সকালেই ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে অপহরণকারী আরাকান লিবারেশন পার্টির আস্তানার সন্ধানে চলে গেছেন বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম ফাইসিং ম্রো কারবারী (পাড়াপ্রধান)। অপহৃত আবদুল্লাহ আল জুবায়ের ও জাকির হোসেন মুন্নার দুই আত্মীয় শুক্রবার সকালে ঢাকার মিরপুর থেকে বান্দরবান জেলা শহরে এসে পৌঁছেছেন।

তারা বান্দরবান প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করার পর পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করেছেন। তারা বিকেল ৩টায় রুমা উপজেলা সদরে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সাক্ষাতের জন্যে রওয়ানা দিয়েছেন।

বান্দরবান প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়কালে অপহৃতদের স্বজন আবদুর রব ও আরাফাত ইসলাম রাসেল জানান, তাঁরা এসেছেন অপহৃত মুন্না ও জুবায়েরের অবস্থান জানা ও উদ্ধার কাজে প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা চাওয়ার উদ্দেশ্যে। জাতীয় স্বার্থে অপহৃতদের দ্রুত উদ্ধার করে পর্যটকদের পাহাড়ে দৃশ্যনীয় স্থাপনাগুলোতে বেড়ানোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরদেন। অপহৃতদের স্বজন আরাফাত ও বর বলেন, জুবায়ের ও মুন্নাদের মত তারাও একাধিকবার রুমা উপজেলার দুর্গম ক্যক্রাডং পাহাড়ের পাশে ফাইসিং ম্রো কারবারীদের ঘরে বেড়াতে গিয়েচিলেন। ওই সময় সেখানে রাতযাপনও করেছেন।

গত রোববার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মুন্না ও জুবায়ের আকস্মিক ভাবে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হয়ে সীমান্তে বন্দি দশায় থাকা এবং তাদের মুক্তির জন্যে ৫০ লাখ টাকা পণ দাবি করার খবরে তারা হতবাক হয়েছেন। প্রথমে তারা অপহরণ ঘটনাটি বিশ্বাসই করতে পারেননি,কারণ ওই দুর্গম এলাকায় ইতিপুর্বে একাধিকবার বেড়ানোর সময় ফাইসিং ম্রো কারবারী ও তার ছোট ভাই মাংসা ম্রোসহ এলাকাবাসীর আতিথীয়তা এবং আচার-আচরণে কখনও এহেন সন্দেহ দেখা দেয়নি।

গত রোববার তাদরে স্বজ জুবায়ের ও মুন্নার অপহরণ বিষয়ে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলোতে সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার সকালে ফাইসিং ম্রো কারবারীর কাছ থেকে ফোনে আটকদের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির সংবাদ পেয়েই এ আরাফাত ও আবদুর রব ঢাকার মিরপুর থেকে শুক্রবার রুমা যাবার উদ্দেশ্যে বান্দরবানে চলে এসেছেন বলে জানান।

তারা জানান, রুমা উপজেলা বাজারের ব্যবসায়ী জয়পালের সাথে ফাইসিং কারবারী মালামাল ক্রয় ও দেনা-পাওনার  ঘটনায় আর্থিক লেন-দেন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে,এসব কারণেই ২পর্যটক অপহরণ কিংবা নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে বলেও তারা সন্দেহ পোষন করছেন।

সাক্ষাতের সময় অপহৃতদের স্বজন আরাফাত ও আবদুর রবকে  পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান আশ্বাস দিয়ে বলেন, নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন অপহৃতদের। সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দাবি করার বিষয়টি প্রশাসন অবগত নন এবং ফাইসিং কারবারীসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর নজরে রয়েছেন বলেও পুলিশ সুপার জানান।

রুমায় পুলিশ ও নিরাপত্তা ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে অপহৃতদের উদ্ধারে করণীয় নিয়ে এগিয়ে যাবারও পরামর্শ দেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ জিস্ব সোর্সের মাধ্যমে নিখোঁজ ২ পর্যটক এবং ২ পাহাড়ি গাইডকে উদ্ধার কাজে চেষ্টা চালাচ্ছেন। পুলিশ সুপার অপহৃত বা নিখোঁজ ব্যক্তিরা জীবিত আছেন এবং সকরের সহায়তায় উদ্ধার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অপরদিকে ওই ২ পর্যটক ও তাদের গাইডকে আরাকান লিবারেশন পার্টির সদস্যরা যে এলাকা থেকে গত রোববার সন্ধ্যায় অপহরণ করেছেন, সেই ঘটনাস্থল রাংগামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়তলী ইউনিয়নের সেপ্রুপাড়া হলেও সন্ত্রাসীদের সাথে মধস্ততাকারী হিসেবে কাজ করছেন বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ফাইসিং কারবারী নিজেই।

সে কারণে ফাইসিং কারবারীর কর্মকান্ড নিয়ে নানামুখি সন্দেহ দেখা দিয়েছে বলে খোদ বিজিবির বান্দরবান সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল এসএম অলিউর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং জনপ্রতিনিধিদের মাঝে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here