ঢাকা: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সারাদেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আগাম সাঁটানো নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টার, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

একইসঙ্গে ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে তাদের তালিকা চেয়েছে ইসি।

কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি চিঠি মঙ্গলবার সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার ও সবগুলো ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

ইসির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কমিশনের যুগ্মসচিব জেসমিন টুলীর তত্ত্বাবধানে এ দুই চিঠি প্রস্তুত করে নির্ধারিত ঠিকানা বরাবরে পাঠানো হয়েছে। ফ্যাক্সের মাধ্যমে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

সূত্র জানায়, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সবধরনের সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারসহ এ জাতীয় প্রচার সরঞ্জামের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইসি প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসারকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করার আদেশ দিয়েছে এ চিঠিতে। রিটার্নিং অফিসাররা তাদের অধীনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের এলাকাভিত্তিক দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়ার পাশাপাশি মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকা সম্বলিত সিডিও সরবরাহ করবেন। আর আগাম লাগানো সব নির্বাচনী প্রচারণা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় প্রত্যেক প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়েও দিক নির্দেশনা দেয়া আছে এ চিঠিতে। এছাড়া বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহারের সময়ে একজন প্রার্থী তার প্রস্তাবক ও সমর্থকসহ পাঁচজনের বেশি রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে যেতে পারবে না। কোনো প্রার্থী যাতে অপর প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল বা প্রচারণায় বাধা দিতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখার নির্দেশ আছে এ চিঠিতে। পুলিশ কমিশনাররা তাদের অধীনে পুলিশ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ খেলাপিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থী যাতে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে ইসি।

এ ব্যাপারে কমিশন সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আমরা সবধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি। ঋণখেলাপিরা যাতে নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারে, সে বিষয়ে আমরা মনিটরিং করবো। আর আচরণবিধি অনুযায়ীই সবকিছু করা হবে।

চিঠি দুটি পাঠানোর বিষয়টিও তিনি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সিইসি একাধিকবার বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই একদিনের নোটিশে সবধরনের নির্বাচনী প্রচারণা সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হবে।’ আচরণবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

নির্বাচনপূর্ব সময় আচরণবিধি কার্যকর করার কথা ইসি থেকে জানানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত সময়কে ‘নির্বাচনপূর্ব সময়’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আচরণবিধি অমান্য করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।

এদিকে সংশোধিত আচরণবিধিতে নির্বাচনী প্রচারকার্যে সরকারি যান, প্রচারযন্ত্র ও সরকারি কোনো কিছু ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো ‘সুবিধাভোগী’ কোনো প্রার্থী সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বা উন্নয়ন তহবিলভুক্ত কোনো প্রকল্পের অনুমোদন, ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ফলক উন্মোচন করতে পারবেন না।

কোনো প্রার্থী কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্বে সভাপতি অথবা সদস্য নির্বাচিত হলে নির্বাচন পূর্ব সময়ে তিনি সে প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না বা সভাপতিত্ব করতেও আচরণবিধিতে নিষেধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ সময়ে তিনি সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজের সঙ্গেও জড়িত থাকতে পারবেন না।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here