বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরেই রাত ১২টা ১ মিনিটে সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একসঙ্গে জ্বলে ওঠলো ৪০ হাজার মোমবাতি। এর মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমীর মাসব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করা হলো। সেই সঙ্গে সূচীত হলো বাঙ্গালীর বিজয়ের মাস পালনের আনন্দ আয়োজন। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই দলে দলে মানুষ শিল্পকলা প্রাঙ্গনে আসতে থাকে। শিল্প সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানের শিল্পী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের আগমনে ও অংশ গ্রহনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন।

সূরধ্বনির মুর্হুমুহুর সুরালয়ে জেগে ওঠে শিল্পকলা। প্রজ্জ্বলিত হয় নতুন জীবনের ছোয়ায় পুরো সেগুনবাগিচা এলাকা।
রাত ১২টা এক মিনিটে ৪০ হাজার মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে এর মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। দেশাত্মবোধক এমন বাণী ও সুরের ঝংকারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো একাডেমী চত্বর।
শুরুতেই বিজয়ের ৪০ বছর উপলক্ষে ঢোল বাজিয়ে, ফানুস উড়িয়ে আনন্দবার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সবার মাঝে। একই সঙ্গে প্রজেক্টরে প্রদর্শন করা হয় মুক্তিসংগ্রামে বাঙালি জাতির বীরত্বগাথা। এরপর একে একে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তির সুবর্ণ উচ্চারণে ধ্বনিত শুধুই বিজয়ের গৌরবগাথা। আনুষ্ঠানিকতার প্রথমেই মঞ্চে আসে সংবৃতা আবৃত্তিচর্চা কেন্দ্র। বৃন্দ পরিবেশনায় তারা কাজী নজরুল ইসলামের রচনা থেকে ‘বীর সেনা দল’ আবৃত্তি প্রযোজনা পরিবেশন করে। এরপরই একক সংগীত নিয়ে মঞ্চে আসে একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। তিনি গেয়ে শোনান, ‘মঙ্গল হোক এই শতকে মঙ্গল সভা’।
এরপর শুরু হয় একক ও দলীয় পরিবেশনা। এ সময় একক পরিবেশনায় অংশ নেন শিল্পী শাহীন সামাদ, অনুপ ভট্টাচার্য, আকরামুল ইসলাম, কানন বালা সরকার, আরতি ধর, মহিউজ্জামান চৌধুরী, কুদ্দুস বয়াতি, সমীর বাউল, পাগলা বাবুল, জয়দেব কর্মকার, আমজাদ দেওয়ান, মমতা দাসী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় উদীচী, সুরের ধারা, বহ্নি শিখা, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, নিবেদন, দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, নৃত্য নন্দন, নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রভৃতি। এরপর রাত ১২টা এক মিনিটে ৪০ হাজার মোমবাতি প্রজ্বালন এবং শব্দ ও আলোক প্রক্ষেপণে ফুটিয়ে তোলা হয় মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়।

আলোর ঝলকানির মাধ্যমে সূচীত বিজয়ের মাস ডিসেম্বর জুড়েই থাকছে, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক মঞ্চায়ন, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ছাড়াও সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনা।
চলচ্চিত্র: শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণ, জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন, ঢাকা শহর ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
নাটক: ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় নাট্যশালা মঞ্চে এবং ১১ থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক্সপেরিমেন্টাল হলে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক মঞ্চায়ন করা হবে।
চারুকলা বিষয়ক: শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে ১২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। সময় সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত।
সংগীত, নৃত্য ও অন্যান্য: ১১ থেকে ১৭ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনের রয়েছে একক সংগীত, দলীয় সংগীত, দলীয় নৃত্য, শিশুদের সংগীত পরিবেশনা, প্রতিবন্দী শিশুদের সংগীত পরিবেশনা, একক আবৃত্তি, বৃন্দ আবৃত্তি, লোক সংগীত/বাউল সংগীত ও যাদু।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here