ডেস্ক নিউজ ::চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে সেদিন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের মুখোমুখি হয়েছিল রেড বুল সালজবুর্গ। সে ম্যাচে সালজবুর্গের তরুণ তারকা স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হরলান্ড কেমন খেলেন, সেটা দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত ছিলেন এক বা দুটি নয়, চল্লিশটা ক্লাবের স্কাউট!

বয়স মাত্র উনিশ। এই বয়সেই একের পর এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে চোখ কপালে তুলে দিচ্ছেন আর্লিং ব্রট হরলান্ড। এবারই প্রথম খেলতে এসেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, এসেই করেছেন বাজিমাত। গ্রুপপর্বের প্রথম পাঁচ ম্যাচেই করেছেন আট গোল। এর মধ্যে আবার একটা হ্যাটট্রিকও আছে। বড় ক্লাবগুলো তো তাঁকে নিয়ে টানাটানি করবেই!

তবে চমক জাগাচ্ছে টানাটানির মাত্রাটা। সেদিন গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে লিভারপুলের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে খেলতে নেমেছিলেন হরলান্ডরা। সে ম্যাচে হরলান্ড কেমন খেলেন, সেটা দেখার জন্য ইউরোপের চল্লিশটা ক্লাবের স্কাউট উপস্থিত ছিলেন। ভাবা যায়!

যদিও এই ম্যাচে গোল করতে পারেননি হরলান্ড। এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের কোনো ম্যাচে গোলহীন থাকলেন। লিভারপুল ম্যাচটা জিতেছে ২-০ গোলে, সালজবুর্গও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিয়ে জায়গা পেয়েছে ইউরোপা লিগে।

গোল না করতে পারলেও, তাঁকে নিয়ে যে মাতামাতি মোটেও অমূলক নয়, সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন হরলান্ড। আক্রমণভাগে আরও দুই প্রতিভাবান খেলোয়াড় তাকুমি মিনামিনো ও হোয়াং হি-চানের সঙ্গে তাঁর রসায়নটা চোখে পড়েছে। বয়স উনিশ হলেও, হরলান্ডের শারীরিক সক্ষমতা দেখলে মনেই হবে না তাঁর বয়স এত কম। উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি, শক্তির দিক দিয়েও বেশ এগিয়ে আছেন এই তরুণ। সাধারণত লম্বা-চওড়া শক্তিশালী স্ট্রাইকারদের মুভমেন্ট অত ভালো হয় না, সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো হয় না, কোনোভাবে ডি-বক্সের মধ্যে গোলটাই করতে পারেন, গোল করা ছাড়া দলের আক্রমণ রচনায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না।

সে ধারণাকে নিয়মিত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছেন হরলান্ড। আর এখানেই তাঁর অভিনবত্ব। নিয়মিত আক্রমণভাগে সতীর্থদের পাস দিচ্ছিলেন, চিন্তায় ফেলে দিচ্ছিলেন ফন ডাইক-লভরেনদের। লিভারপুলের ডিফেন্ডারদের মধ্যে বা পেছনে ফাঁকা জায়গা দেখলেই সেখানে চলে গিয়েছেন, নিজের দুর্দান্ত পজিশনিং ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন। কেন তাঁকে নতুন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বলা হচ্ছে, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন বেশ ভালোভাবে।

হরলান্ডের খেলা দেখার জন্য সেদিন মাঠে ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রধান স্কাউট মার্সেল বট। ইউনাইটেডের কোচ ওলে গুনার সুলশার যেকোনো মূল্যে নরওয়ের এই তরুণকে দলে ভেড়াতে চান, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান ম্যানেজার ওলে গুনার সুলশার যখন নরওয়ের ক্লাব মল্ডের ম্যানেজার ছিলেন, হরলান্ড তখন সে ক্লাবে খেলতেন। সাবেক শিষ্যকে নিজের নতুন ক্লাবে আবারও নতুন করে চাইছেন নরওয়ের কিংবদন্তি। কিন্তু হরলান্ড কি এখনই ইউনাইটেডের মতো ক্লাবে যাবেন?

সে ক্ষেত্রে বেরসিকের মতো বাঁধা দিতে পারেন সুপার এজেন্ট মিনো রাইওলা। ইতালিয়ান এই এজেন্ট দায়িত্ব নিয়েছেন হরলান্ডের। হরলান্ড এখন থেকে কোন ক্লাবে যাবেন, কত বেতন পাবেন—এসব এই এজেন্টই দেখবেন। অর্থলোভী বলে এই এজেন্টের ‘বিশেষ সুনাম’ আছে। ম্যাথিস ডি লিট, পল পগবা, রোমালু লুকাকু, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, মারিও বালোতেল্লি, মার্কো ভেরাত্তি, হারভিং লোজানোসহ আরও বেশ কিছু তারকার গুরুত্বপূর্ণ দলবদলে হাত ছিল এই এজেন্টের। আর প্রত্যেকটা দলবদলে আকাশছোঁয়া কমিশনও নিয়েছেন। ফলে এখনই তথাকথিত বড় ক্লাবে হরলান্ডকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহা রাইওলার।

এর মধ্যেই বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও আরবি লাইপজিগের মতো ক্লাবের সঙ্গে হরলান্ডের দলবদল নিয়ে আলোচনা সেরেছেন রাইওলা। লক্ষ্য একটাই, আপাতত দুই মৌসুম দ্বিতীয় সারির কোনো একটা ক্লাবে হরলান্ডকে রেখে দাম বাড়িয়ে তারপর শীর্ষ কোন ক্লাবে তাঁকে বিক্রি করা। কারণ হরলান্ডের বর্তমান চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ ধরা হয়েছে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ইউরো। অর্থাৎ মাত্র ৩০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েই হরলান্ডকে কিনতে পারবে যেকোনো ক্লাব। এখনই ৩০ মিলিয়ন দিয়ে বড় ক্লাবের কাছে হরলান্ডের সওদা করলে পড়ে বেশি ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে নেবে কে?

ইউনাইটেড, আরবি লাইপজিগ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ছাড়াও সেদিন হরলান্ডের খেলা দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত ছিল চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার সিটি, জুভেন্টাস, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, লিভারপুল ইত্যাদি ক্লাবের স্কাউট। সব মিলিয়ে মোট চল্লিশটা ক্লাব।

পরের মৌসুমে হরলান্ড সালজবুর্গে থাকবেন, এমন আশা খুব সম্ভবত সালজবুর্গ নিজেরাও করছে না!

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here