স্টাফ রিপোর্টার :: তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। এ কারণে তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দেন। তাই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আইন সংশোধন প্রয়োজন- ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০ গড়তে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম সম্প্রতি একথা বলেন।

রাজধানীর তোপখানা রোডে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সভা কক্ষে এই আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম।

সভায় মূলপত্র উপস্থাপন করেন বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স বাংলাদেশের লীড পলিসি এডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ও ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের যৌথ আয়োজনে সভার সহযোগিতায় ছিল ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে)।

কাজী জেবুন্নেছা বেগম তার বক্তব্যে আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যেমন- একটি রোডম্যাপ খসড়া করা হয়েছে এবং সেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই এটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ পলিসি চূড়ান্তকরণেও আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণেরও কাজ চলছে। এছাড়া বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিষয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি আমরা। আশা করছি পরবর্তী সংশোধিত আইনটি আরো শক্ত ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর হবে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা উচিত, যাতে তামাকগ্রহীতাদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে যায়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাহমিদুল ইসলাম বলেন, নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক গ্রহণের প্রবণতা কমাতে তাদেরকে সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে এ সম্পর্কে কঠোর আইনও করতে হবে। আর আইনের যুগোপযোগীকরণ করাটাও বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন হয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সের জনসংখ্যার মধ্যে তামাকের ব্যবহারের হার হ্রাস পেয়ে ৩৫.৩% হয়েছে, যা ২০০৯ সালে ৪৩.৩% ছিল। তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে, বাংলাদেশ সরকার ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ প্রণয়ন এবং ২০০৬ সালে প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করে। এফসিটিসির সাথে আরও সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য ২০১৩ সালে সরকার আইনটিকে সংশোধন করে এবং ২০১৫ সালে বিধি প্রণয়ন করে।

উল্লেখ্য, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ১৯৯০ সাল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন ও যথাযথ বাস্তবায়নে এবং তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নীতি নির্ধারকদের সাথে অধিপরামর্শ ও এডভোকেসি কাজ পরিচালনায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসাবে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ২০০৯ সাল থেকে অন্যান্য তামাক নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্টিভিস্ট এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করার জন্য কাজ করে আসছে এবং আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে তাদেরকে একত্রিত করছে। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ইতোমধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের জন্য সরকারকে বিভিন্ন নির্দেশিকা, (এলজিডি, ডিএসসিসি, ডিএনসিসি, সাভার ও সাতক্ষীরা পৌরসভা), বাস্তবায়ন নির্দেশিকা বা গাইডলাইন (এনটিসিসি) এবং হসপিটালিটি সেক্টরের জন্য কৌশলপত্র (বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়) উন্নয়নের জন্য টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করেছে।#

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here