শিপু ফরাজী,চরফ্যাশন প্রতিনিধি :: ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সনের এই দিনে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কি’র তান্ডবে ভোলাসহ উপকূলীয় ১৮ জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। যার মধ্যে ভোলা জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার।

জানাযায়, স্মরণকালের সর্বাপেক্ষা মারাত্মক এই ঘূর্ণিঝড়ে জীবন, সম্পদ ও ফসলের ধ্বংস সাধন হয়। সরকারি হিসেবে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিলো এবং ৩৮ হাজার সমুদ্র নির্ভর মৎস্যজীবী ও ৭৭ হাজার অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৪৬ হাজার অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী ঘূর্ণিঝড় চলাকালে মাছ ধরার সময় মৃত্যু বরণ করে। মোট ২০ হাজার এর অধিক মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়। সম্পদ ও ফসলের ক্ষতির পরিমাণও ছিলো অনেক।

১০ লাখের ও অধিক গবাদি পশুর মৃত্যু হয়, চার লাখ ঘরবাড়ি এবং ৩ হাজার ৫শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭০ সালের এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার এবং জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিলো প্রায় ১০৬ মি। সমুদ্রে ভরা জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড়টি সংগঠিত হওয়ায় এমন প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিলো।

ঘূর্ণিঝড় গোর্কির ছোবলে সব হারানো স্মৃতি নিয়ে এখনো অনেকে বেঁচে আছেন। এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম ভয়াল ১২ নভেম্বরের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ঝড়ের ছোবল থেকে বেঁচে ফেরা পরিবারের একমাত্র সদস্য তিনি। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৬ সদস্যকে হারিয়ে সর্বহারা হন তিনি। চরফ্যাশন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আব্দুস ছাত্তার হাওলাদার বলেছেন, ঝড়ের তান্ডবে তাঁর বাড়িতেই ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ঝড়ের বর্ণনা করতে গিয়ে ষাটার্ধ্ব বৃদ্ধা মনপুরার মফিজা খাতুন বলেন, সেই ভয়াল সাম্রদ্রিক জলচ্ছাস ও ঘুর্নি ঝড়ের সময় অথৈ পানিতে একটি ভাসমান কাঠ ধরে প্রায়মৃত অবস’ায় গভীর সাগরের দিকে তিনি ভেসে যাচ্ছিলেন। কে বা কাহারা ঐদিন তাকে উদ্ধার করে। যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন তিনি নোয়াখালীর একটি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন বলে জানান।

ভোলার ইতিহাস যতদিন থাকবে ঠিক ততদিনই উপকুলীয় বাসী (১২ নভেম্বর) এই দিনটির কথা কোনদিনই ভুলবেন না। এদিকে, ১২ নভেম্বরকে স্মরণ রাখতে ঝড়ের ছোঁবলে সর্বহারা মানুষ মিলাদ,দোয়া, মোনাজাত এবং স্মরণসভার মধ্যদিয়ে স্বজনদের স্মরণ করবেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here