ভোলা: ১০ দিসেম্বর। ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়ে রচিত হয়েছে ভোলায় প্রথম স্বাধীনতার ইতিহাস।

দীর্ঘ ৯মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। আর তখনি সমগ্র ভোলার মানুষ আনন্দ উলস্নাসে ফেটে পড়েন। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর সেই স্মৃতি আজ মনে পড়ে ভোলার সাহসী সৈনিকদের।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে এক এক করে চালায় পৈশাসিক কর্মকান্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরিহ মানুষদের ধরে এনে হত্যা করা হয়। লাশগুলোও দাফন করা হয় এখানেই।

এছাড়াও ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারের ধরে এনে হত্যা করে তেতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেতুলিয়ার পানি।

পাক-হানাদার বাহিনীরা বহু নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করে সকাল বেলা লাইনে দাড় করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তৎকালীন সময়ে অগনিত মানুষ মারা যায় ওই হানাদার বাহিনীর হাতে। সেখানে গনকবর দেয়া হয় নিহতদের। সেটি এখন বধ্য ভুমি।

১৯৭১-এ দেশ রড়্গায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সরকারী স্কুল মাঠ, বাংলা স্কুল, টাউন স্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিড়্গন শুরম্ন হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। ওই সকল যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরন করেন। পাশাপাশি বহু পাক হানাও মারা যায়।

অবশেষে ১০ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প থেকে লঞ্চযোগে পাক বাহিনী পলায়ন করে। তখনও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলি বর্ষন করে।

ওই দিনই ভোলার আকাশে উড়ানো হয় স্বাধীন দেশের পতাকা। ভোলা পরিনত হয় উৎসবের শহরে। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, ৯ ডিসেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা ওয়াপদা এলাকায় চারদিক থেকে পাক হানাদের ঘিরে ফেলি, এক পর্যায়ে তারা যখন দেখলো তাদের মুভ করার মত কোন অবস্থান নেই তখন ভোর রাতের দিকে গুলি বর্ষন করতে করতে তারা পালিয়ে যায়, তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। লঞ্চযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাদপুর এলাকায় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাক হানাদের লঞ্চটি নিমজ্জিত হয়।

তিনি জানান, ভোলঅতে ৭ মাসের যুদ্ধ হয়েছে, পাক হানাদার বাহিনীর আসার পর মুক্তিযোদ্ধারা ভোলায় যুদ্ধে অংশগ্রহন করি। ভোলা সরকারী স্কুল এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চরফ্যাশন থানায় আক্রমন করে অস্ত্র সংগ্রহ করে, ২৭টি অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিভিণ্ন এলাকায় যুদ্ধে অশগ্রহন করে।

বাংলাবাজারে যুদ্ধে ৫০ জন, ঘুইংগারহাট এলাকায় ৭জন, দৌলতখানের একজন, বোরহাউদ্দিন ও দেউলা এলাকায় ৩০জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধের সময় আমরা মানুষের সহযোগীতা পেয়েছি, তারা আমাদের আনত্মরিকভাবে গ্রহন করেছে, সেটা আমাদের চিরদিন স্মরন থাকবে। ১০ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হওয়ার পর ভোলার মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আনন্দ উচ্ছাসে ফেটে পড়ে।

প্রবীন সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেণ, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলা ওয়াপদা ভবন দখল করে পাক-হানাদাররা শত শত মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করে হত্যা করে। সেখানে অনেক নারী নির্যাতন হয়েছে। সে সমসত্ম স্মৃতি আমরা আজো ভুলতে পারিনি। জীবন বাজি রেখে ভোলার অনেক মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করে ভোলাকে হানাদার মুক্ত করে।

এদিকে, ভোলা মুক্ত দিবস উপলড়্গে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পড়্গ থেকে র‌্যালি ও আলোচনাসভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

আদিল হোসেন তপু/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here