পৌলমী গাঙুলীকে এম মিঠু, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি :: টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগরের বিখ্যাত জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর উত্তরসূরি দুই বাংলার নন্দিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পৌলমী গাঙুলীকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময়ে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় কম্পোজার ও সংঙ্গীত শিল্পী প্রয়াগ যোশী।

গোপালপুর প্রেসক্লাব ও আমরা গোপালপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ এর যৌথ আয়োজনে গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন।

পৌলমী গাঙুলীপ্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার। বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক বাণীতোষ চক্রবর্তী, ওসি মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, হেমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রওশন খান আইয়ুব, জমিদার পরিবারের শেষ নায়েব গনেশ চন্দ্র রক্ষিত, প্রবীণ শিক্ষক জোয়াহের আলী, আব্দুস সালাম মেম্বার, গ্রুপ এডমিন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আনজু আনোয়ারা ময়না, সাংবাদিক কে এম মিঠু প্রমুখ।

পরে ওই দুই শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা শেষে হেমনগর জমিদার বাড়ি পরিদর্শন করেন।

পৌলমী গাঙুলীব্যক্তিগত চরিত্রে জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরি বহু গুনাবলীর অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রচন্ড শিক্ষানুরাগী, সুন্দর শাসক, মানবতাবাদী সর্বোপরি ন্যায় বিচারক ছিলেন। প্রজাসাধারনের সুবিধার্থে তিনি রাস্তার মোড়ে মোড়ে কুপ র্নিমাণ এবং বহুসংখ্যক পুকুর খনন করেন। তিনি অত্যন্ত সৌখিন এবং সুন্দরের পুজারী ছিলেন। হেমনগরের প্রাকৃতিক নৈস্বর্গিক দৃশ্যের মধ্যে নির্মিত তার অপূর্ব কারুকার্যময় বাসভবন আজও তার সাক্ষ্য বহন করছে। হেমচন্দ্র চৌধুরি অত্যন্ত ধর্মভীরু হলেও ইসলামের প্রতি যথেষ্ঠে উদার ছিলেন।

হেমচন্দ্র চৌধুরীর পিতা কালিচন্দ্র চৌধুরী তদানিন্তন ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর থানার অর্ন্তগত আম্বারিয়া এস্টেটের জমিদার ছিলেন। জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী কালিচন্দ্র চৌধুরীর একমাত্র পুত্র সন্তান। তাছাড়াও কালিচন্দ্র চৌধুরীর তিন কন্যা সন্তান ছিল। জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী চার পুত্র ও চার কন্যার জনক ছিলেন।

পৌলমী গাঙুলীহেমচন্দ্র চৌধুরী আম্বারিয়া হতে যমুনা নদীর পূর্বতীরে গোপালপুর থানার সুবর্ণখালী নামক গ্রামে দ্বিতীয় বাড়ী নির্মাণ করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। সুবর্ণখালীতে দীর্ঘদিন বসবাস করার পর যমুনার নদীভাঙ্গনের কবলে পড়লে তিনি সেখান থেকে ১৮৯০ সালে বর্তমান অবস্থান শিমলাপাড়া গ্রামে নতুন বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। তার নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় হেমনগর। ১৯০০ সালে হেমনগরে তাঁর বিমাতা মায়ের নামে প্রায় বিশ একর জমির উপর হেমনগর শশীমুখী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।

পৌলমী গাঙুলীময়মনসিংহ আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রতিষ্ঠায় দশজন দাতার তালিকায় হেমচন্দ্র চৌধুরীর নাম চার নম্বরে লিপিবদ্ধ আছে। হেমচন্দ্র চৌধুরী চট্রগাম জেলার সীতাকুন্ডে অবসি’ত চন্দ্রনাথ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি টাঙ্গাইলের ফৌজদারী উকিলবার প্রতিষ্ঠা করেন। গোপালপুর সূতী ভি এম পাইলট হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সময় তিনি জমি ও অর্থ দান করেন। পিংনা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠায়ও তার সিংহ ভাগ অবদান রয়েছে। জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৯৫২ সালে ভারতের কাশিতে মৃত্যুবরণ করেন।

এলাকার সংগ্রামী কৃষকনেতা হাতেম আলী খাঁনের নেতৃত্বে জমিদার বিরোধী আন্দলোন গড়ে উঠলে ১৯৪৬ সালে দেশ বিভাগের পূর্বেই বংশধরগণ স্থাবর অস্থার সম্পত্তি ফেলে রেখে কলকাতায় চলে যান। তার পরিত্যক্ত বাড়িটির আয়তন বড় দু’টি পুকুরসহ প্রায় ত্রিশ একর। জমিদারের পরিত্যক্ত বাড়ীতে ১৯৭৯ সালে এলাকাবাসীর উদ্যোগে স্থাপন করা হয় হেমনগর ডিগ্রী কলেজ।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here