তাহমিনা শিল্পী :: অলিতে গলিতে দেখা পরিচয়/ ঠিকানার লেনদেন/ হৃদয়ের কোন ঠিকানা থাকেনা/ কথাটা কি বুঝলেন?
হ্যাঁ, তিন নং ভুতের গলি শিরোনামে এটা কৃষ্ণপক্ষ সিনেমার একটি অসাধারন গান। এ সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালিত সিনেমা কৃষ্ণপক্ষ। বরাবরের মতই অদৃশ্য থেকেও ছবির পুরো কৃতিত্ব নিল যে মানুষটি সে হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর গল্প, সিনেমা, গানের প্রতি সবসময়ই সকলের থাকে ভিন্নরকম এক আকর্ষন। আর প্রত্যাশাও থাকে অনেক।
হ্যাঁ, তিন নং ভুতের গলি শিরোনামে এটা কৃষ্ণপক্ষ সিনেমার একটি অসাধারন গান। এ সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালিত সিনেমা কৃষ্ণপক্ষ। বরাবরের মতই অদৃশ্য থেকেও ছবির পুরো কৃতিত্ব নিল যে মানুষটি সে হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর গল্প, সিনেমা, গানের প্রতি সবসময়ই সকলের থাকে ভিন্নরকম এক আকর্ষন। আর প্রত্যাশাও থাকে অনেক।
কাল সান্ধ্যাকালীন শো তে দেখে এলাম “কৃষ্ণপক্ষ”। তাই সবাই জানতে চাচ্ছে কেমন দেখলাম? কেমন কাজ করেছে শাওন? গল্পটা সিনেমাতে কতোটা পেয়েছি? ইত্যাদি ইত্যাদি। সাবার এত এত প্রশ্নই বলে দেয় কৃষ্ণপক্ষ নিয়ে সবার আগ্রহ কতোটা। এর কারন একটাই কৃষ্ণপক্ষ হুমায়ূন আহমেদের।
শো চলাকালিন হলে পিন পতন নিরাবতা থাকলেও শো শেষে দর্শকদের গুঞ্জন শুনে যা বুঝলাম তা হল, এই সিনেমার মাধ্যমে চলচিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক হলো মেহের আফরোজ শাওনের। কিন্তু দর্শক সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র হুমায়ূন আহমেদের কাহিনী ও শাওন হুমায়ূন পত্নী হওয়ার কারনেই হয়তবা আকাশচুম্বী একটা প্রত্যাশা নিয়েই হলে এসেছে। পুরো সিনেমাটা জুড়েই সবাই হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনার ফ্লেভার খুঁজেছে। আর সেকারনেই তাদের প্রত্যাশা যথাযথ ভাবে পুরন হয়নি। দর্শক প্রতিক্রিয়া ও আলোচনায় মনে হল যেন সিনেমার পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ নিজেই। শাওন এক নিমিষে ভেনিস হয়ে গিয়েছে।
তবে দর্শক সারি থেকে আমার ব্যাক্তিগত মতামত হচ্ছে, শাওন যথেষ্ট মেধাবী এবং এটা তার প্রথম পরিচালনা হলেও সে এখানে তার মেধার প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হয়েছে। একজন নব্য পরিচালক হিসেবে সে সাতন্ত্রভাবেই কাজ করার দাবী রাখে। তবুও সে দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই এবং কাহিনীর প্রয়োজনে হুমায়ূন স্যারের পরিচালনার ফ্লেভারটা রেখেছে যথেষ্ট পরিমানে। আর সাথে তার নিজস্বতার মিশেল একটা নতুন ধারা। যা আমার কাছে যথেষ্ট সময়োপযোগী ও সঙ্গত মনে হয়েছে। দুটো গানের ও রোড এক্সিডেন্টের দৃশ্যায়ন খুব ভালো লেগেছে। মুহিবের দুর্ঘটনার খবর শুনে অরুর খালি পায়ে হাসপাতালে চলে আসা ভালো লাগাটা অনেকগুন বাড়িয়ে দিলো। আর শেষ দৃশ্যটা হাসপাতাল থেকে নুহাশ পল্লীতে নিয়ে যাওয়াটা তো অসাধারন একটা ভাবনার প্রকাশ। আমার মনে হল যেন হুমায়ূন স্যার মৃত্যুকালে মানসিক ভাবে ওখানে শেষ নিশ্বাসটি ফেলেছিলেন।
ভালো লাগার সাথে সাথে কিছু অসঙ্গতিও চোখে পড়েছে। যেমন: চিত্রনাট্যে কোথাও কোথাও হুমায়ূন আহমেদের সংলাপের কন্টিউনিটি ও পারফেকশন ছেড়ে গেছে। বানিজ্যিক ছবির নায়িকা মাহিকে দিয়ে অরু চরিত্রে কাজ করানোটা ভিষনভাবে চ্যালেঞ্চিং ছিল। মাহি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। তবে কিছু কিছু জায়গাতে তার অভিনয়ে স্বভাব সুলভ বানিজ্যিকতার ফ্লেভার ও চঞ্চলতা প্রকাশিত হয়েছে। যা মূল গল্পের অরুর সাথে বেমানান। আর দর্শক মাহির সেই অপারগতার সময়টুকুতে হুমায়ূন আহমেদকে আরো বেশি করে মিস করছিল। তাদের সবারই ধারনা হুমায়ূন স্যার হলে মাহিকে দিয়েই পারফেক্ট কাজটা বের করে আনতেন।
ঠিক একই কারনে আরফান আহমেদ সহ আরো দু’একটি চরিত্র সিলেকশানে আরো একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি। তবে রিয়াজ, ফেরদৌস, আজাদ আবুল কালাম, তানিয়া আহমেদ, মৌটুসি বিশ্বাস, কায়েস চৌধুরী ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে তাদের স্বভাব সুলভ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিভার পরিচয় রেখেছন।
যাহোক আমার মনে হয় প্রত্যাশার সমপরিমাণ না হলেও প্রাপ্তির পাল্লাটা খুব একটা কম নয়। সেক্ষেত্রে পরিচালক মেহের আফরোজ শাওনকে অভিনন্দন ও শুভকামনা দেয়া যেতেই পারে। চলচিত্রের চ্যালেঞ্চিংপথ শুভ ও মসৃন হোক তার কাজের সফলতায়।
তবে একটা কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। সেটা হল-আমাদের পরিচালকেরা যারা আমাদেরকে নতুন করে হল মুখি করেছেন। তারা বোধকরি কেউ-ই এখনো পর্যন্ত নাটক কিম্বা টেলিফিল্মের আবহের বাইরে গিয়ে সিনেমার নিজস্ব আবহটা আমাদেরকে দিতে পারেননি। তার প্রমান পাওয়া গেল কৃষ্ণপক্ষতেও। তবে আমরা আশাবাদি ভবিষ্যতে এই আবহ কাটিয়ে সিনেমার সিনেমার প্রকৃত ফ্লেভারে আমরা ভাল কিছু সিনেমা পাবো এবং এই পরিচালকেরাই সেটা সম্ভব করে দেখাবেন। জয়তু বাংলা সিনেমার। বাংলা সিনেমার সাথেই থাকুন। নিজস্ব শিল্প-সাংস্কৃতি ধারন করুন।
০৪.০৩.১৬
লেখকের ইমেইল: tahmina_Shilpi@yahoo.com