মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা খুলনার পাইকগাছা-কয়রা উপজেলার জীবনযাত্রা। প্রতি নিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে বসবাস। বৃদ্ধি পেয়েছে লবণাক্ততা। ফলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।

প্রতিনিয়ত বিলিন হচ্ছে গাছ-পালা, নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষি উৎপাদন, কর্মহীন হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিকল্প কাজের সন্ধানে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে কর্মহীন হাজারও মানুষ। বাঁধ মেরামত করা সহ সংগ্রাম করে যাচ্ছে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতিবছর কোনো না কোনো দুর্যোগ এ অঞ্চলে আঘাত হানছে। ইতোমধ্যে গত ২ বছরের ব্যবধানে ৩টি বড় ধরণের দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এতে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। সময়ের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়েছে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নদ-নদী। যার মধ্যে কপোতাক্ষ, শিবসা ও হাড়িয়া নদ-নদী অন্যতম।

এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় দুই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। বেড়েছে লবণাক্ততা, সমুদ্রের পানি এবং চিংড়ি চাষ করার ফলে নদীর লবণাক্ততা পানি পোল্ডার অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি এবং জমির উর্বরতা শক্তি, হ্রাস পাচ্ছে কৃষি ফসল উৎপাদন। সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির। পাইকগাছায় লতা ইউনিয়নের তেতুলতলা গ্রামের হেমা মন্ডল জানান, এলাকার কোথাও কোনো সুপেয় পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হয়। এতে শারীরিক শ্রম যেমন বেশি লাগে, তেমনি সময়ও অপচয় হয় বেশি। ঝড়, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, কৃষি ফসলসহ চলাচলের রাস্তা। বিলিন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের গাছপালা।

ইতোমধ্যে এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে অসংখ্য প্রজাতির দেশীয় মাছ। নানা দুর্যোগের কারনে পয়োনিষ্কাসন ব্যবস্থা ভেঙ্গে
পড়ায় বাড়ছে বিভিন্ন ধরণের রোগ-বালাই। দুষিত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত এবং মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে যেমন নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ, তেমনি সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ক্ষয়ক্ষতি রোধ এবং সহায়তা প্রদান ও সচেনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন স্টোক হোল্ডারদের মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে ত্র দু’উপজেলায় কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা ডরপ পানি ও জীবন প্রকল্প। সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও এ অঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবন যাপনের জন্য দরকার জিও, এনজিও ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়। নিতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।

দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, আমাদের ইউনিয়নটি একটি দ্বীপবেষ্টিত ইউনিয়ন। জলবায়ু পরিবর্তনের
প্রভাবে প্রতিনিয়ত যেমন বাড়ছে দুর্যোগ সহ নানা সমস্যা, তেমনি ক্রমশ এলাকায় বসবাসও অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। এলাকার মানুষ প্রতিবছর চলে যাচ্ছে অন্যত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য নিতে হবে স্থায়ী কর্মপরিকল্পনা। যার মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যাপ্ত নিরাপদ পানির উৎস তৈরী, এর প্লাটফর্ম এবং টয়লেটের প্লাটফর্ম উচু এবং উন্নত করা, স্থানীয় সরকার ও সরকারের জলবায়ু মোকাবেলায় অর্থায়ণ বাড়ানো, পর্যাপ্ত ড্রেন, কালভার্ট ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা সহ এ অঞ্চলের পরিবেশ সহনীয় বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে বলে মনে করছে উপকূলীয় মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here