নরসিংদী : ভালো নেই নরসিংদীর সবজিচাষিরা। টানা কয়েক দিনের অবরোধের প্রভাব পরেছে কৃষকদের সবজির উপরে।

এক সময়ের প্রাণবন্ত কৃষকের মুখএখন অনেকটাই মলিন। কারণ টানা অবরোধ রাজনৈতিক সহিংসতায় পাইকারশূন্য হয়ে পড়েছে সবজির হাটগুলেতে।

একই সঙ্গে কমে গেছে বিদেশে সবজি রপ্তানিও। সবজির দাম কমে যাওয়ায় চাষিরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রসত্ম। উচ্চ মূল্যের উপকরণ দিয়ে জমিতে সবজি চাষ করে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকের মুখের হাসি নেই ।

নরসিংদীর বিভিন্ন পাইকারি সবজির হাট ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এই দুর্দশার চিত্র পাওয়া গেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীল হয়ে শানিত্মপূর্ণ বিকল্প কর্মসূচির পথ খুঁজে বের করবে এমনটাই প্রত্যাশা ভূক্তভোগী কৃষকদের।

নরসিংদী জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মুকসেল আলী জানান, নরসিংদীতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর সবজির চাষ হয়। এর মধ্যে সবচে বেশি সবজি চাষ হয় শিবপুর, বেলাব, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায়। উৎপাদিত সবজী হলো, ফুলকফি, বাধাকফি, মূলা, সিম, লাউ, টমেটো, বেগুন, লালশাক, পালন শাক, গাজর, ডাটা, শশা, খিরা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, পুইশাক, উছস্তা, মুখী কচু, পানি কচু, কাচকলা বেগুন, করলা, চিচিংগা, ঝিঙা, মরিচ, আলু, ঢেঁড়স, পেঁপেসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ হয়। উৎপাদিত সবজি বেলাব উপজেলার বারৈচা ও নারায়ণপুর রায়পুরা উপজেলার জঙ্গি শিবপুর, মরজাল, শিবপুর উপজেলার শিবপুর, পালপাড়া, যোশর ও সৃষ্টিগড় কোন্দারপাড়া পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকেন কৃষকরা। ভরা মৌসুমে পাইকারি ক্রেতারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতিদিন অনত্মত ৫০ ট্রাক শাক-সবজি কিনে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় সরবরাহ করে। ওই সব জেলার মানুষের শাকসবজির চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশই পূরণ করে নরসিংদীর উৎপাদিত সবজি দিয়েই। পাশাপাশি এ জেলার সবজি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশির মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

যে কৃষকরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জমিতে ফসল ফলিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে, সেই কৃষকরা আজ ভালো নেই। টানা অবরোধ সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো কৃষি খাতও ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছে। অবরোধের কারণে পাইকারি ক্রেতা কমে যাওয়ায় অন্য বছরের চেয়ে এ বছর ব্যাপক হারে কমে গেছে সবজির দাম।

সরেজমিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণপুর সবজির হাটে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে সবজিচাষিরা ভ্যান ও রিকশায় ঝুড়ি ভর্তি করে বিভিন্ন সবজি নিয়ে হাটে জড়ো হয়েছেন। কিন্তু টানা পাচ দিনের অবরোধের ফলে বিভিন্ন জেলা- বিশেষ করে ঢাকা,চট্রগ্রামের পাইকারি ক্রেতা আসতে না পারায় বিপাকে পড়ে চাষিরা। ফলে পাইকারের তুলনায় বাজারের সবজির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তারা নিজেদের ইচ্ছামতো কমে দর হাকাচ্ছেন।

আধা বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন বেলাবর নারায়ণপুর ইউনিয়নের পুটিমারা গ্রামের চাষি কবির মিয়া। সবজি নিয়ে আসা বাজারে কথা হয় তাঁর সঙ্গে তিনি বলেন, আবরোধের এক সপ্তাহ আগে যে বেগুন এক থেকে দেড় হাজার টাকা মণ বিক্রি করছি, এখন তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৭০০ টাকা। বেগুন সপ্তাহে দুই দিন তুলতে হয়। সময় মতো না তুললে বেগুনে পোকা ধরে পচে যায়। তাই বাধ্য হয়েই আবরোধের মধ্যেও আমাদের জমি থেকে বেগুন তুলতে হয়। কিন্তু ক্ষেতের কীটনাশকের দাম খুবই বাড়তি, এই টাকা বাদ দিয়ে আমাদের লাভ তো দূরের কথা, এখন লোকসান হচ্ছে।

একই কথা বললেন শিবপুর বাজারে আসা উপজেলার ব্রাহ্মন্দী গ্রামের কৃষক বাদল মিয়া, তিনি জানান ৮৭ শতাংশ জমিতে ফুলকফি চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ফুল বিক্রি শুরু করেছেন। কিন্তু হরতাল অবরোধের কারনে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। যে প্রতি কফি আবরোধের আগে ৩০/৩৫ টাকা পাইকারী বিক্রি হত এখন তা ১৫/২০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদনের তুলনায় তার লোকশান হচ্ছে।

কথা হয় বাজারে আসা বাড়ৈআলগী গ্রামের লাউ চাষী তমিজ উদ্দিন সাথে তিনি বলেন, আমি ২০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করেছি। কিন্তু হরতালের কারনে প্রতি পিছ লাউ ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম কমে গেছে।

সবজিচাষিরা বলেন, সকাল ৮টার সময় টমেটো নিয়া বাজারে আসছি, অবরোদেল কারণে ঢাকা থেকে পাইকার আসতে পারে নাই। কী করে আমরা চলাফেলা করব বুঝতে পারছি না।

কৃষক কবির মিয়া বলেন, এই দেশটা সবার, আমাদের কে দিয়েই সবাই রাজনীতি করে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি আমাদের চিন্ত না করে, তাহলে আমরা কিভাবে চলব। হরতাল ও অবরোধ দিয়ে আমাদের না মাইর‌্যা অন্যভাবে তাঁরা আন্দোলন করুক। এতে কমপক্ষে গরিব কৃষকরা মরার হাত থেকে রক্ষা পাবে তাহলে দেশও বাঁচবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here