জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ্) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া একাত্তরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। সেখানে সংঘটিত হত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনায় যার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তিনি হচ্ছেন ‘রাজাকার কমান্ডার’ ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। সম্প্রতি একধিক গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরই মধ্যে অভিযোগ তদন্তে কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যনালের কমিটি। কয়েকজনের স্বাক্ষ্যও নিয়েছে তারা। তদন্ত দলের সদস্যরা ইউসুফ হারুনের যুদ্ধাপরাধের কিছু প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে বলেও জানান।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত চলাকালিন সময়ে শনিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে হামদার্দ এর এমডি ইউসুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সংক্রান্ত অপ-প্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লক্ষ্মীপুর জেলা ইউনিট কমান্ড।
মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল্লাহ (মনা বাকশাল) এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল। আরো উপস্থিত ছিলেন মক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও সার্জেন্ট (অবঃ) মক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল হামদর্দের এমডি যুদ্ধাপরাধী নয় দাবি করে তিনি বলেন, হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি একটি মহল অপ-প্রচার চালাচ্ছে। যা আদৌ সত্য নয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার সাথে রাজাকারদের কোনো সম্পর্ক ছিলো না। আবার তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেননি। ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া যুদ্ধকালীন সময়ে কাউকে হত্যাও করেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে একজন সমাজসেবী ইউসুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া মুক্তিযোদ্ধা না হলে তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাণারে কেন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে করা হয়েছে সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে এ কে এম শাহজাহান কামালসহ অন্যেরা দাবি করেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে একজন সমাজসেবী হিসেবে হামদর্দের এমডির অবদানকে স্বীকৃতি দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আব্দুর ছাত্তার ও বাসুকে হত্যার ঘটনায় ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া জড়িত ছিলেন বলে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়। রায়পুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন পাঠান, ইসমাইল হোসেন এবং শহীদ পরিবারের লোকমান ও পারভীন আক্তার এ অভিযোগ করেন।
পরে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযোগ তদন্তের কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি তদন্ত কমিটি। কয়েকজনের স্বাক্ষ্যও নিয়েছেন তারা। তদন্ত দলের সদস্য হেলাল উদ্দিন ইউসুফ হারুনের যুদ্ধাপরাধের কিছু প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে বলে জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার। বক্তব্য মেলেনি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যেরও।