bdp_satarদুটো হাত নেই, ছেলেটির সম্বল বলতে দুই পা। তবে আছে অদম্য মনের জোর। আর আছে হার-না মানার দৃঢ় মানসিকতা। এসব কিছুকে সম্বল করেই সে ভেসেছিল পানিতে। ছোটবেলার সেই স্বপ্ন নিয়েই আক্ষরিক অর্থেই আজ চ্যাম্পিয়ন বিশ্বাস কে এস। কানাডায় প্যারা অলিম্পিকের সাঁতার থেকে ছাব্বিশ বছরের এই যুবক সম্প্রতি নিয়ে এল তিনটি পদক।

ছোটবেলায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার দুটো হাত কেড়ে নিয়েছিল। তখন বিশ্বাসের বয়স ছিল মাত্র ১০। অকস্মাত্‍‌ হাত হারানোর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে, ওই অল্প বয়সেই নতুন করে বাঁচার লড়াই শুরু করে ছেলেটি। তার সেই পরিশ্রমেরই সুফল মিলেছে কানাডায় প্যারা অলিম্পিকের আসরে।

পদক অবশ্য এ বারেই প্রথম নয় তার। বিশ্বাস এর আগেও পদক এনেছেন। গত বছরই বেলাগাভির প্যারা-সাঁতার থেকে ছেলেটি ঘরে তোলেন তিনটি রুপার পদক।

জীবনের এত সাফল্যও কিন্তু তাকে ভুলতে দেয়নি দুর্ঘটনার স্মৃতি। পদকজীয় এই সাঁতারু বলেন, ‘আমার বাবা সত্য নারায়ণ মূর্তি ছিলেন কৃষি দপ্তরের কর্মী। কোলারে, আমাদের বাড়ির একাংশে সদ্য প্লাস্টার হয়েছিল। সেখানেই পানি দিচ্ছিলাম। হঠাত্‍ই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাই বিদ্যুতের তারে। বাবা আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুত্‍‌স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। আমিও ছিলাম কোমায়। একটানা দু-মাস।’

ছেলেটি কোমা থেকে বেঁচে ফেরেন। কিন্তু জীবন পেলেও তার দুটা হাত রক্ষা করা যায়নি। সেখানের সব ছেড়ে বিশ্বাস তার পরিবার নিয়ে চলে যান বেঙ্গালুরুতে।  নিজের অযোগ্যতাকে ঢেকে যে ভাবে চ্যাম্পিয়ন করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন, তারপর থেকেই হাত নেই বলে আজ আর কোন আক্ষেপ নেই তার। সাঁতারে তার পরিবার সবসময়ই উৎসাহ জুগিয়ে গেছে। কখন কুং-ফু, কখনও নাচেও মেতেছেন তিনি।

প্যারা অলিম্পকে তার এই সাফল্যে ‘আস্থা’ ও ‘বুক আ স্মাইল’ নামে দুটো এনজিও-র অবদান আছে। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এতটুকু কার্পণ্য করেননি তিনি। বিশ্বাসের কথায়, ‘আগেও সাঁতার কাটতাম। কিন্তু ওই দুই এনজিও-ই আমাকে প্রফেশনাল হয়ে উঠতে সাহায্য করে। ওরাই ভালো ট্রেনার খুঁজে দেয়। পরিকাঠামোও তৈরি করে দেয়। ২০২০-র টোকিও অলিম্পকে যোগদান করা আমার পরবর্তী লক্ষ্য।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here