শেরপুর : নেই শ্রমিকদের ঢাকা-ঢাকা বলে হাক-ডাক, কুলি ও অটোরিক্সা চালকদের নেই যাত্রীদের টানা হেচড়া এবং হকার আর বাস টার্মিনালের দোকানীদের নানা পসড়ার সমাহারও নেই। সন্ধ্যা হলেও জেলা শহরের দুই টি বাস টার্মিনাল ভুতুরে পলস্নী হয়ে উঠে।
দিনের বেলাতেও বিরান ভুমির মতো পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে সারি সারি যাত্রীবাহী বাসের লাইন। সারাদেশে ১৮ দলের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে শেরপুরের প্রায় ৭ হাজার মটর শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস, পন্যবাহী ট্রাক-ট্র্যাংক লড়িসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ওইসব পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান এবং হোটেল-রেস্তারা ও পান-বিড়ির দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব ব্যাবসায়ীর পরিবারের সদস্যরাও আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে।
জানাগেছে, শেরপুর জেলা শহরের নবীনগর বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা-সিলেট, লোকাল বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জসহ শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা সদরে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। সেইসাথে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, বগুড়া, রাজশাহী, যশোহর, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় ডে-নাইটের আরো প্রায় ২০ থেকে ২৫ টি যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায় শহরের রঘুনাথ বাজার পুরাতন বাস ষ্ট্যান্ড থেকে। কেবল মাত্র শেরপুরের মালিকাধীন শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কে দুরপালস্নার যাত্রীবাহী বাস, লোকাল সার্ভিস যাত্রীবাহী বাস, আন্ত:জেলা পণ্যবাহী ট্রাক এবং ট্রাংলড়িসহ প্রায় ৫ শতাধিক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। সেইসাথে আরো প্রায় দুই শতাধিক মটর মেকানিক শ্রমিক রয়েছে এখানে। এসব শ্রমিকরা পরিবহন চলাচল না করার কারণে বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে এসব শ্রমিক তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফি এবং নতুন বছরের ভর্তি ফি ও বই কেনা নিয়ে দু:চিন্তায় পড়েছে। অনেক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিজেদেরই সংসার চলছে না এখন ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়ার খরচ জোগাবো কি করে।
অনেক মালিক ও শ্রমিক জানায়, শুধু অর্থিক সংকটই নয় বাসের নিরাপত্তার জন্য অনেক শ্রমিক রাতের বেলা বাসে ঘুমাতো। কিন্তু রাতের অন্ধকারে অবরোধকারীরা বাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় এখন আর কোন শ্রমিক রাতের বেলা বাসে ঘুমোতে সাহস পাচ্ছে না। এতে বাস মালিকরাও তাদের মল্যবান যাবাহন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অনেক মালিক কিসিত্মতে গাড়ী কেনায় অবরোধের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকায় তাদের কিস্তি দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে অবরোধের জন্য দায়ী বিএনপি ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের অবরোধ করে রাখার চিন্তা ভাবনা করছে বলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানায়। সাধারণ শ্রমিকদের দাবী, সরকার বা বিরোধী দল বুঝিনা। এই ধ্বংসাত্বক রাজনীতি ছেড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ খুজে দেশের লাখ লাখ শ্রমিকের নিরাপদ জীবন-যাপন এবং দু’বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া হোক।
শাহরিয়ার মিল্টন/