ঢাকা: বিশ দলীয় জোটের হরতালের সকালে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পল্লবী এলাকায় এ ঘটনায় পুলিশের ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত একজন।

পল্লবী থানার ওসি জিয়াউজ্জামান জানান, বিএনপি-জামায়াতকর্মীরা হঠাৎ রাস্তায় নেমে এসে গাড়ি ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে সড়কে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয় বলে জানান ওসি।

এতে কতোজন আহত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছররা গুলিতে একজন আহত হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুরে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদ এবং গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ দলীয় নেতাদের মুক্তি দাবিতে সারা দেশে ২৪ ঘণ্টার এই হরতাল করছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

শীতের সকালে ঘন কুয়াশার মধ্যে মিরপুরের ঘটনাটি ছাড়া রাজধানীতে আর বড় কোনো গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগের রাতে রাজধানীতে বোমাবাজি ও  অটোরিকশায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে যাতে আহত হন পাঁচজন।

কতোয়ালি, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ ও আদাবর থানা পুলিশ বলছে, এসব এলাকায় সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে কোনো মিছিল তারা দেখেননি। সকাল ৭টার পর দয়াগঞ্জের বটতলা মোড়ে কয়েকটি হাতবোমা বিস্ফোরণের কথ শোনা গেলেও পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।

হরতালে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ভোর থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোয় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে রোববার রাত থেকেই বিজিবি নেমেছে।

হরতালের সকালে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি খুব একটা দেখা না গেলেও গণপরিবহন, অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করছে।

বাস মালিকরা নিরাপত্তার কারণে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রেখেছেন, তবে ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর পথে কিছু মিনিবাস ছেড়ে যাওয়ার খবর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি অবণী শঙ্কর কর বলেন, আমার এলাকা দিয়ে স্বল্প দূরত্বের কিছু বাস যেতে দেখেছি। তবে দূর পাল্লার বাস চলছে না। এমনিতে রাস্তায় গণপরিবহন আছে। হরতালে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক।

ইউনিক পরিবহনের মহাপরিচালক আবদুল হক জানান, রাতে তাদের যেসব বাস দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় ছেড়ে গেছে সেগুলো নিরাপদেই পৌঁছেছে। তবে নিরাপত্তার খাতিরে সকাল থেকে বাস বন্ধ রেখেছেন তারা।

বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইনস্পেক্টর এএম মামুন জানান, সদরঘাটের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে কুয়াশার কারণে এমনিতেই  বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চ পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।

সকাল থেকেই নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান করছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের প্রিজন ভ্যান ও সাঁজোয়া যান।

সকাল ৭টার পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করছে।

জনগণ এ সরকারকে আর চায় না। সকাল থেকে দোকানপাট, যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ থেকেই প্রমাণ হয়, জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে হরতালে সমর্থন করছে।

হরতালে নাশকতা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সারাদিনই মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে তাদের বিক্ষোভ সমাবেশেরও কর্মসূচি রয়েছে।

ছাত্রলীগ গত শনিবার গাজীপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিরোধের ঘোষণা দিলে উত্তেজনার মধ্যে জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। জনসভা করতে না পেরে ওইদিন গাজীপুরে হরতাল করে ২০ দল, সারা দেশে পালন করা হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি।

গাজীপুরে হরতালের দিনই খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে সোমবার হরতাল করার ঘোষণা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

হরতালের আগে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও শহীদ মিনার এলাকায় বোমায় আহত হন দুইজন। আর কাজীপাড়ায় অটোরিকশায় দেওয়া আগুনে দগ্ধ হন আরো তিনজন।

এছাড়া পল্টনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালেয়ের একটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়; গাজী ভবনের সামনের সড়কে বোমাবাজিও হয়

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here