সড়ক হয়ে উঠেছে ভয়ংকর, প্রাণ হাতে নিয়ে যাত্রাজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: গত আট দিনে একই পরিবারে ৬ জনসহ ১২জনের মৃত্যুর ঘটনায় লক্ষ্মীপুরে চলাচলরত যানবাহনে অদক্ষ চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা। আর এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরো প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্নস্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এদিকে অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির গতিরোধে ট্রাফিক বিভাগকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে বলে বলছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকারীরা ।

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের দক্ষিন তেমুহনীস্থ অফিসার্স ক্লাবের সামনে পিকআপ ভ্যানের চাকার নিচে পৃষ্ঠ হয়ে মিজানুর রহমান রুবেল (৩৫) নামের এক স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু হয়। নিহত মিজানুর রহমান রুবেল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের লাহারকান্দী মোল্লাবাড়ীর দ্বিন মোহাম্মদের ছেলে ও টুমচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এছাড়া তিনি লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবি ছিলেন।

বুধবার (২৩ জানুয়ারি) লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের পশ্চিম মান্দারী এলাকায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ট্রাক-সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংর্ষষে একই পরিবারের ৬জনসহ ৭জন নিতহ হন। নিহতরা হলেন- সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রী একই পরিবারের শাহ আলম ও তার শিশু পুত্র অমিত হোসেন, সামছুন নাহার ও তার দুই মেয়ে নাছিমা আক্তার, রোকেয়া বেগম এবং মেয়ের জামাতা রুবেল হোসেন ও সিএনজি চালক নুর হোসেন। একই পরিবারের নিহত সবাই সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের সাদারঘর ও সিএনজি চালক নুর হোসেন একই উপজেলার নেয়ামতপুর এলাকার বাসিন্দা।

সোমবার (২১ জানুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা মহাসড়কের যাদৈয়া নামক এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে।
পৌরসভার টুকা মিয়ার রাস্তার মাথা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা খাদে পড়ে যায়। এতে গুরুতর আহত হন কাজী সিরাজ উদ্দিন। পরে তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। নিহত কাজী সিরাজ উদ্দিন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের ইনপেক্টর ও কমলনগর উপজেলার চরজাঙ্গালিয়া গ্রামে আবদুল মতিনের ছেলে। একই দিন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আনন্দ পরিবহনের একটি বাস লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার যাদৈয়া এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসের ৩০ যাত্রী আহত হন।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে রামগতি-লক্ষ্মীপুর সড়কের নুড়ি গাছতলা এলাকায় লেগুনা ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মো. আলাউদ্দিন স্বপন (৫০) নামে এক পথচারী নিহত হয়। এ ঘটনায় মো. সৌরভ নামে এক লেগুনা যাত্রী আহত হন। নিহত আলাউদ্দিন স্বপন সদর উপজেলার দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের বাসিন্দা।

শুক্রবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধূরীরহাট সড়কে ট্রাকচাপায় মোটর সাইকেল আরোহী গৃহবধু সুমি নিহত হয়। নিহত সুমি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমনী মোহনএলাকার জয়দলের স্ত্রী। এ দুর্ঘটনায় স্বামী জয়দল আহত হন। তারা স্বামী-স্ত্রী মোটর সাইকেলে করে মজুচৌধুরীরহাট যাচ্ছিলেন। পথে একটি ট্রাক মোটর সাইকেলটিকে চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুর-মজুচৌধুরীর হাট সড়কে পিকআপ ভ্যানচাপায় মো. ইদ্রিস মিয়া (৩৫) নামে এক বালু শ্রমিক নিহত হয়। নিহত ইদ্রিস সদর উপজেলার শাকচর গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে। দুর্ঘটনার আগে পিকআপ ভ্যানে বালু তুলছিলেন ইদ্রিস। এ সময় পেছন থেকে অপর একটি মালবাহী পিকআপ ভ্যান তাকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মোশারফ হোসেন মিঠু জানান, শুধু ছোট যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়, ভারী যানবাহনেও প্রতিদিন জেলার কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় চালকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে ভুক্তভোগীদের। দায়ী চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে লক্ষ্মীপুরে শুধু নয়, দেশে কোথাও কোনো মায়ের বুক এ ভাবে খালি হবে না।

লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. ইব্রাহিম বলেন, চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা বেশী। এ ছাড়া হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার করা, মাদক সেবন করে গাড়ী চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং এবং পথচারীদের অসতর্কতায়ও দুর্ঘটনা ঘটছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের জেলা সভাপতি কার্তিক সেনগুপ্ত বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবীতে আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি। এরপরও সড়কের অবস্থা পাল্টায়নি। যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি থামিয়ে দিচ্ছে মানুষের জীবনের গতি। সড়কে এখন প্রাণ হাতে নিয়েই যাত্রা করতে হয় মানুষকে। নিসচা জেলায় দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত গাড়ির গতিরোধে ট্রাফিক বিভাগের ভূমিকাই মুখ্য।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই মামুনুর রশিদ বলেন, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটছে অদক্ষ চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে। এ সব বিষয় দেখভাল করা ও চালকদের সচেতন করার দায়িত্ব বিআরটিএ’র। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here