মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম মাসুম, মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আবু হানিফকে হত্যা করে লাশ পুড়িয়ে দগ্ধ করার ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পর ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে শনিবার (৮ এপ্রিল) মোরেলগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
আবু হানিফের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রদল নেতাসহ ৬ জনকে আসামি করে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি থানায় প্রেরণ করলে থানা পুলিশ লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য আদালতের অনুমতি সাপেক্ষ্যে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করে।
ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে থানা পুলিশ ৯ মাস পূর্বে আদালতে দায়েরকৃত আবেদনটিকে শনিবার মামলা হিসেবে গ্রহন করে।
নিহত আবু হানিফের পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, মোরেলগঞ্জ পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও ব্যাবসায়ী আবু হানিফ (৩৮) ঈদুল ফেতরের দু’দিন আগে ৪ জুলাই ২০১৬ রাত পৌনে ২ টার দিকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। রাতে আবু হানিফ দোকান থেকে বের হলে ভাইজোড়া গ্রামের সত্তার খানের ছেলে রফিক খান পরিকল্পিতভাবে মোটর সাইকেলযোগে তাকে হোটেল হালিমে নিয়ে যায়। সেখানে মধ্যরাত অবধি হোটেল ম্যানেজার শাহিনের কক্ষে আড্ডা দেয়। সেখান থেকে রফিক ও শাহিন মিলে ব্যবসায়ী আবু হানিফকে পৌর পার্ক এলাকার নদীর তীরে নিয়ে যায়। নদীর তীরে পূর্ব থেকে অবস্থানরত আরো ৪ জন মিলে আবু হানিফকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বস্তা বন্দি করে নদীতে ফেলার উদ্যোগ নেয়।
এসময় জনৈক ব্যক্তি বিষয়টি দেখে ফেলায় লাশ নদীতে না ফেলে রাত সাড়ে ৩ টার দিকে কাপুড়িয়া পট্রির সাইমুম গার্মেন্টসের বেড়া কেটে ভেতরে ঢুকিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে আবু হানিফের লাশ সম্পূর্ণ দগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ৫ টি দোকান পুড়ে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়।
পরের দিন সাকালে ঘটনাস্থল থেকে পুড়ে অঙ্গার হওয়া আবু হানিফের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ এ লাশের ময়না তদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করে।
১২ জুলাই পুলিশ লাশ ভস্মিভূত এলাকা পরিষ্কারের সময় আবু হানিফের ব্যবহৃত চাবির থোকা উদ্ধার করে। এরপর আবু হানিফের স্ত্রী নুরুন্নাহার মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করার জন্য ধর্ণা দেয়ায় পরও পুলিশ অজ্ঞাত কারনে মামলা নেয়নি। এমনকি এ মামলার প্রধান আসামি রফিককে ১৭ জুলাই আটক করলেও পুলিশ তাকে চুরির পুরানো একটি মামলার আসামি দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
পরে বাধ্য হয়ে আবু হানিফের স্ত্রী নুরুন্নাহার বাদী হয়ে বাগেরহাট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-সি আর ১৫০/১৬,তারিখ-২৮/৭/১৬। মামলার আসামিরা হল, উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের সত্তার খানের ছেলে রফিক খান (৩৮), পৌর সদরের আ. লতিফ হাওলাদারের ছেলে শাওন(৩০), মৃত. প্রফুল্ল পোদ্দারে ছেলে ধলু পোদ্দার(৪০), কালু পোদ্দার (৪৮), আব্দুল কাদের মিয়ার ছেলে জিয়া (৩৭), হালিম হোটেলের ম্যানেজার খাউলিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে শাহিন (৩৬)। আসামিরা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রদলের নেতা ও কর্মী।
বিজ্ঞ আদালত মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশকে মামলাটি গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করে। তবে অঙ্গার লাশটি আবু হানিফের কিনা তার জন্য বিজ্ঞ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে শনিবার পেনাল কোর্টের-৩০২/৩৪/২০১ধারায় মামলাটি গ্রহন করে।