মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ, নোয়াখালী থেকে :
স্বামীর পরকিয়া প্রেমে বাঁধা ও যৌতুক না দেওয়ায় গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াখালী সুধারামের নেয়াজপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামে স্বামী, শ্বাশুড়ী, ননদ ও ননদের জামাই গলা টিপে হত্যা করেছে গৃহবধু সালমা আক্তার মুক্তা (২৬) কে।
এদিকে গৃহবধু মুক্তা আত্মহত্যা করেছে বলে শ্বশুর মানিক মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশকে খবর না দিয়ে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্য ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে গৃহবধুর মা মোবাশ্বেরা বেগম ও তার পরিবার অভিযোগ করেন, তার মেয়ে মুক্তাকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতনের পর গতকাল একই কায়দায় নির্যাতন ও গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত মুক্তার মাতা মোবাশ্বেরা বেগম হাসপাতালে কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, গত ৫ বছর আগে সাহাপুর গ্রামের আবদুর রব ওরফে মানিক পুলিশের মেয়ে সালমা আক্তার মুক্তার সাথে পাশ্ববর্তী দেবীপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে মাকসুদুর রহমানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে মাকসুদুর রহমান মাসুদ ৫ লক্ষ টাকা প্রথমে যৌতুক নেয়। পুনরায় আবার ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। বর্তমানে মাকসুদুর রহমান মাসুদ ঢাকা গাজীপুরে রেজিষ্ট্রি অফিসে চাকুরী করে। গত ১ বছর থেকে মেয়েকে নিয়ে গাজীপুরে বাসায় থাকত। মুক্তার স্বামী মোবাইলে অন্য একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কের কথা জানতে পেরে স্বামীকে বাঁধা দেয়।
এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে গত কয়েক মাস আগে স্ত্রী মুক্তাকে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সদরের দেবীপুর গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। স্বামীর গ্রামের বাড়িতে আসার পর শ্বশুর, শাশুড়ী, ননদ ছেলের সাথে বিরোধের জের ধরে ও যৌতুকের টাকার জন্য তাকে দফায় দফায় নির্যাতন করে। গৃহবধু মুক্তা পুনরায় যৌতুক দিতে অস্বীকার করে।
এদিকে স্বামী বাড়িতে এসে শনিবার দুপুরে এ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ও ঝগড়া সৃষ্টি হয়। ঘটনার দিন স্বামী মাকসুদুর রহমান, শ্বশুর মানিক মিয়া, শাশুড়ী লাকী, ননদ বকুল ও ননদের স্বামী আনোয়ার হোসেন সবাই একজোট হয়ে গৃহবধুকে মারধর ও নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তাকে গলাটিপে হত্যা করে।
অপরদিকে গৃহবধু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে এলাকায় প্রচার করে এবং তাকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে। নিহতের পিতা বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসী, নিহতের এক ভাই আমেরিকা প্রবাসী। নিহতের একটি ৩ বছরের সন-ান রয়েছে।
এব্যাপারে নিহত মুক্তার শ্বশুর মানিক মিয়া ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, সে নিজে আত্মহত্যা করেছে। তাকে আমরা নির্যাতন করে হত্যা করিনি। এদিকে এস আই মেহেদী মাকসুদ জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়না তদনে-র পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন- মামলার প্রস’তি চলছে তবে কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।