বুড়িরচর (বরগুনা) প্রতিনিধি::

স্ত্রী চলে যাওয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাঁচ বছর ধরে ঘরে শিকলবন্দী হয়ে আছেন জয়নাল হোসেন তুহিন (২৯) নামের এক যুবক। তুহিন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের সুরেশ্বর বাজার এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, ২০১৩ সালে নিজের পছন্দে বিয়ে করেন তুহিন। মা-বাবা, স্ত্রী নিয়ে আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলেন তুহিনের। বিয়ের পর বরিশালের একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি হয় তার। ফলে বরিশালেই থাকতে হত তাকে।

 

২০১৭ সালের কোনো কারণ ছাড়া ডিভোর্স দিয়ে স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যায়। খবর পেয়ে তুহিন বাড়ি চলে আসেন। ঘরে ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকেন। পরে স্বজনরা দরজা ভেঙে অজ্ঞান অবস্থায় তুহিনকে উদ্ধার করেন। এরপর থেকেই তুহিন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে।

জিনে ধরেছে মনে করে বেশ কয়েকজন ওঝার শরণাপন্ন হন তুহিনের বাবা-মা। তাদের পরামর্শে পুনরায় বিয়ে করান তাকে। তারপরও সুস্থ হয়নি তুহিন। ফলে দ্বিতীয় স্ত্রীও বাবার বাড়িতে থাকেন।

তুহিনের মা সুফিয়া বেগম জানান, টাকার অভাবে ছেলেটার কোনো চিকিৎসা করাতে পারছিনা। তাই বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে রাখতে হয়। ছাড়া পেলে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। সরকার এত মানুষকে সহায়তা দেয় আমাদের চোখে পড়েনা।

এ বিষয়ে তুহিনের বাবা আবদুল জব্বার জাগো নিউজকে বলেন, আমার চার মেয়ে দুই ছেলে। মেয়েরা সবাই শশুরবাড়ি থাকে। আর বড় ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকে। আমার ছোট ছেলে তুহিন পাঁচ বছর ধরে পাগল। লোকজনের কাছ থেকে খাবার চেয়ে এনে জীবন চালাই। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তাই পাইনি।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মইনুদ্দিন ময়না জাগো নিউজকে জানান, আগে ভালো ছিল তুহিন। কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করত। হঠাৎ স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে যাওয়ায় ভীষণভাবে মানসিক আঘাত পায়। এরপর থেকে তার এ হাল।

বরগুনা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়েই তার কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here