নারায়ণগঞ্জ : তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে স্কুল ছাত্র শিশু সাব্বির হাসান (১১) হত্যা মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। প্রথমত বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়ার কারণে বন্ধুরাই তাকে হত্যা করেছে কী না। দ্বিতীয়ত সমবয়সীদের সঙ্গে ঝগড়ার ফায়দা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের কেউ কাজটি করেছে কী না এবং তৃতীয়ত পারিবারিক কোন দ্বন্দ্বের বলি সাব্বির হয়েছে কী না। কারণ নিহত সাব্বির তার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম সনত্মান।

এদিকে সাব্বিরের নিখোঁজ এবং লাশ উদ্ধারের খবর এখনো জানানো হয়নি জর্দানে কর্মরত তার হতভাগ্য মা পলি বেগমকে।

অপর দিকে মাত্র ৪১ দিন আগে সাব্বিরের বড় মা (মোবারক মাঝির প্রথম স্ত্রী) মনোয়ারা বেগম মারা যান। প্রথম স্ত্রী এবং দ্বিতীয় সংসারের প্রথম সনত্মানকে হারিয়ে শোকে বিহবল বৃদ্ধ মোবারক মাঝি।

সংসারের অভাব ঘোচাতে কয়েক বছর আগে লেবানন যান নিহত সাব্বিরের মা পলি বেগম। এক বছর আগে দেশে ফিরে চাকুরি নিয়ে জর্ডানে যান তিনি। বৃদ্ধ স্বামীর কাছে রেখে যান আদরের সন্তান সাব্বির (১১) ও জিসান (৫) কে। তবে তার সেই আদরের ধন যে না ফেরার দেশে চলে গেছে তা এখনো জানেন না পলি বেগম।

গত রোববার সন্ধ্যায় শহরের গোগনগর মর্সিনাবন্দ এলাকার একটি খাল থেকে নিখোঁজের ১০ দিন পর সাব্বিরের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সোমবার নিহতের পিতা মোবারক মাঝি বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করলেও তাতে কারে নাম উলেস্নখ করা হয়নি।

জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর পূর্বে মোবারক পলি বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। পলি বেগমের ঘরে সাব্বির (১১) ও জিসান (৫) নামের দুই সন্তান রয়েছে। তারা গোগনগর উত্তর মর্সিনাবন্দ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকে।

মোবারকের প্রথম স্ত্রী মনোনয়ারা বেগম ৩ ছেলে এবং ২ মেয়েকে নিয়ে নরসিংপুর এলাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকতেন। প্রথম সংসারের বড় ছেলে রশিদ ও মেঝে ছেলে সেন্টু মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছোট ছেলে ইকরাম গার্মেন্ট শ্রমিক। মেয়ে মনি ও পারম্নল। প্রথম সংসারে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না মোবারক মাঝির। তবে জীবদ্দশায় মনোনয়ারা বেগম মাঝে মধ্যে মোবারক মাঝির মর্সিনাবন্দের বাসায় যেতেন। ৪১ দিন আগে মনোনয়ারা বেগম মারা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোবারক একসময় নৌকা চালাতেন। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে বেকার। সংসারে অভাব অনাটনে দিন কাটতো। অভাব দূর করতে কয়েক বছর আগে লেবানন যান ছোট স্ত্রী পলি। বছর খানেক আগে লেবানন থেকে এসে জর্ডানে যান তিনি। তারা পাঠানো টাকা দিয়েই মোবারক মাঝি সংসার চালাতেন। তৃতীয় শ্রেণী পর্যনত্ম পড়াশুনা করে নিহত সাব্বির তিন বছর আগে লেখা পড়া ছেড়ে দেয়।

ছেলের মৃত্যু সর্ম্পকে মোবারক মাঝি বলেন, আমার কোন ধন সম্পদ নেই। কোন শত্রম্নও নেই। তাইলে কেন এমন অইল।

এদিকে মোবারক মাঝির অভিযোগ অনুযায়ী উত্তর মর্সিনাবন্দ এলাকার খোকনের ছেলে হিমেল (১১), একই এলাকার জামিলের ছেলে মাসুম(১২),জমসেরে ছেলে মাহিন (১০)ও মোহাসীন (১২)কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আটককৃতরা সবাই নিহত সাব্বিরের খেলার সঙ্গী।

আটককৃতদের মধ্যে হিমেল স্থানীয় তাজেক প্রধান কিন্ডারগার্টেনের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ও মাসুম সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র। বাকী দু’জনের মধ্যে মাহিন শহরের নয়ামাটির আলো ফ্যাশনে ও মহসিন একটি মিলে কাজ করে।

মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই নজরম্নল ইসলাম জানান, গত ৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে সাব্বিরের সঙ্গে জুতা নিয়ে আটক ৪ জনের ঝগড়া হয়। ওই সময় দূর থেকে ঘটনাটি দেখি মোবারক মাঝি সাব্বিরের বন্ধুদের ধমক এবং ধাওয়া দেন। ওই সময় ধাওয়া খেয়ে চলে যায় সাব্বিরের বন্ধুরা। তাদের সঙ্গেই যায় সাব্বিরও। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল বলে দাবি মোবারক মাঝির। গত ১৩ মার্চ সাব্বির নিখোঁজ হবার ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেন মোবারক মাঝি।

নিহতের পিতার দেওয়া তথ্যানুযায়ী সাব্বিরের ৪ বন্ধুকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে আটককৃতরা বলছে তারা সাব্বিরকে হত্যা করেনি। আটককৃত ৪ জনই শিশু হওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে সাবধানতা অবলম্বন করে।

এসআই নজরুল আরো জানান, ৩টি সূত্র ধরে মামলার তদনত্ম চলছে। একটি হচ্ছে যেদিন সাব্বির নিখোঁজ হয়েছিল ওই দিন সাব্বিরের সঙ্গে কারা ছিল সেটি। অপর দু’টি হচ্ছে পারিবারিক। নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেও তিনি জানান।

এম আর কামাল/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here