আ হ ম ফয়সল :: মুজিব বর্ষকে নতুন ছন্দে রাঙাতে “গুণীজনের গল্প ধারায় স্বপ্ন বুনন” এই কার্যক্রম নিয়ে নিজ উদ্যোগে এক গুচ্ছ স্লোগান নিয়ে স্কুলে স্কুলে বেড়িয়ে পড়েন লেখিকা জুঁই জেসমিন। তাঁর স্বপ্ন, জগতের সব শিক্ষার্থী সৃজনশীল মনের অধিকারী হোক, হোক প্রতিভার বিকাশ। শুধু শিক্ষিত নয়, মানুষ হোক, জীবন চলার পথে সব বাধা পেড়িয়ে তারা এগিয়ে চলুক আলোর পথে।

জুঁই জেসমিন ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মানবাধিকার কর্মী ও লেখক।তাঁর রক্তের সাথে মিশে আছে কবিত্ব। বাবা তছলিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন শিক্ষানুরাগী, নিজ এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠা করেন নিজ জমিতে ‘ রায়মহল উচ্চ বিদ্যালয়’। মা তাহেরা আহমেদের নিগূঢ় মমতা শিখিয়েছে তাঁকে দেশ, মাটি, মানুষ ভালবাসতে। সৃজনশীল, মননশীল, আত্মবিশ্বাসী স্বপ্নময়ী লেখিকা জুঁই জেসমিন শুধু নিজ জেলা উপজেলা নয়, সারা দেশের, সারা বিশ্বের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীর অন্তরে গুণীজনের গল্প বুনন করতে চান। শিক্ষার্থীদের জন্য এবারের অমর একুশে বই মেলায় দাঁড়িকমা প্রকাশনী হতে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তাঁর লেখা, “শ্রেষ্ঠ একুশ মনীষী”।

জুঁই জেসমিন, ২০১৭ সাল থেকে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবনী আলোচনা করেন গল্পের নির্যাসে। কত লড়াই আর দারিদ্যের মধ্য দিয়ে সেকালের বিজ্ঞানীরা মহা কিছু আবিষ্কার করে গেছেন তা গল্প ধারায় শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বপ্ন বুনেন, যাতে তারাও সৃষ্টিশীল হতে পারে এবং সেই স্বপ্ন লালন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের মাঝে সমসাময়িক ঘটনা তুলে ধরেন সচেতনতা মূলক উদ্দেশ্যে ছন্দে শপথে।

এসবের মাঝে শিক্ষার্থীদের উদবুদ্ধ করেন, দেশীয় টিভি চ্যানেল দেখতে, দেশের খবর শুনতে। জনপ্রিয় দেশীয় চ্যানেলে- কোন সময়ে কোন চ্যানেলে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হয়? তা চ্যানেলসহ অনুষ্ঠান গুলোর নাম বলে তাদের উৎসাহিত করেন।

স্টার জলসা জি বাংলা ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল পরিহার করে নিজ দেশীয় চ্যানেল দেখে ভাল কিছু শিখুক, ভাল কিছু অর্জন করুক তারা স্বপ্নিল স্বপ্নে, এই তার প্রত্যাশা।

প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে এমনটি বেশ শোনা যাই, তাই তিনি বলেন আত্মহত্যা করা মহা পাপ এ নিয়ে বেঁচে থাকার গল্প শোনান অনেক প্রতিষ্ঠিত গুণী মানুষের জীবনী টেনে। মেয়েদের একান্ত ভাবে সতর্ক করেন মোবাইল ফোনে গোপনীয় ছবি আদান প্রদান ব্যাপারে।

জুঁই জেসমিন শিক্ষার্থীদের বলেন, যারা সত্যিকারে ভালোবাসে তারা কখনোও-ই বাজে প্রস্তাব দিতে পারেনা বা খারাপ কিছু আবদার করতে পারেনা। এমনটি ভুল যাতে কেউ না করে আবেগ বসে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের মাঝে সচেতনামূলক গল্পে গল্পে তাদের মনোযোগী করে তোলেন এবং জাগিয়ে তোলেন ভুল সঠিক জীবনের কাজগুলি চিহ্নিতকরণে। সাঁতার না জেনে যাতে কোনো শিশু জলে না নামে, গাছে না ওঠে এবং যেখানে সেখানে ম্যাচের কাঠি আগুন জ্বেলে খেলা না করে, বিদ্যুৎ সংযোগ জিনিস পত্রে হাত না দেয়, স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে গেম না খেলে। হঠাৎ অল্প দিনের পরিচয়ে কারো সাথে কোথাও না যায়, তাদের দেওয়া কিছু না খায় এ বিষয়ে খুব জরুরী ভাবে সতর্ক করেন শিশুদের। এসব কারণে যেই এলাকার যেই শিশু মারা গেছে বা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে, তাদের ঘটনা শুনিয়ে তাদের সতর্ক করে তোলেন।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যাতে প্রত্যেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সময় দেন এবং ভাল বন্ধু হয়ে উঠেন। তাঁর কথা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলো বাবা মা এবং শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হলো পরিবার। শিশুর প্রতিভার যথাযথ মূল্য দেওয়া বিকশিত করা অভিভাবকের দায়িত্ব।

জুঁই জেসমিন আমাদের জানান, ২০১৭ সাল হতে যত স্কুলে তিনি গেছেন গুণীজনের গল্পের ঝুড়ি নিয়ে এবং আত্মহত্যা, খুন ধর্ষণ এমন সমসাময়িক বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনা শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেন, সেই থেকে সেসব প্রতিষ্ঠান হতে কোনো দুর্ঘটনার খবর শোনা যায়নি। বরং অনেক শিক্ষার্থী বিজ্ঞানীদের মত বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখে এবং বন্ধুরা মিলে প্রজেক্ট তৈরির মৌলিক কিছু আবিষ্কার করার পরিকল্পনা করে ।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম ও মাধ্যমিক/প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রেরণা মিশ্রিত উৎসাহ অনুমতি নিয়ে চলছে তাঁর এই এক ব্যতিক্রম কার্যক্রম।তার একান্ত ইচ্ছে ও লালিত স্বপ্ন, সব শিক্ষার্থীরা সৃষ্টিশীল হয়ে উঠুক, মানুষ হয়ে সমাজে প্রভাব ছড়াক, প্রতিভার বিকাশে। শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুক প্রতিভার লালনে- তারাও গুণীজনের মতো গুণীজন হয়ে উঠুক, তাদের চিন্তা ভাবনায় সৃষ্টি কর্মে।

অপরদিকে, আর ভিন দেশি পতাকা দেশের আকাশে নয়, এবার ঘরে ঘরে উড়বে বাংলার লাল সবুজের পতাকা। দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা ভরে লাখো শহীদদের স্মরণ করতে জুঁই জেসমিন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা বিতরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন। এ কার্যক্রমটিও এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here