নিউজ রুমএডিটর। ইউনাইটেড নিউজ ২৪.কম

005838232702aঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মিদশায় সেহেরির সময় মুসলমান জিম্মিদের জন্য মাছ ও চিংড়ি পরিবেশনের আদেশ দেয় বলে জানিয়েছেন ওই বেকারির শেফ সুমীর বরাই। যিনি নিজেও জিম্মিদশায় ছিলেন, পরে কোনোরকমে পালিয়ে বের হতে পেরেছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমস-কে জিম্মিদশার বর্ণনায় তিনি এ তথ্য জানান।

এছাড়াও রাতের দিকে বন্দুকধারীরা অন্যান্য জিম্মিদের চা এবং কফি পরিবেশন করতে বলে এবং সূর্যাস্তের আগে বন্দুকধারীরা বন্দীদের নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন পাঠ করতে বলে।

শেফ সুমীর বরাই নিউইয়র্ক টাইমস-কে জানান, বন্দুকধারীদের একেবারে কাছ থেকে দেখা ও তাদের সাথে কথোপকথনের অভিজ্ঞতা থেকে সুমীর বরাই বলেন, তারা খুবই শিক্ষিত এবং স্মার্ট। তাদেরকে দেখে কেউ মনে করবে না যে, তারা এমন একটা কাজ করতে পারে।

শেফ সুমীর বরাই বলেছেন, বন্দুকধারীদের ভয়ে প্রথমে তিনিসহ সাত আটজন ওয়াশরুমে পালালেও পরে বন্দুকধারীরা তাদের অভয় দিয়ে বলে, বাঙালিদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা এখানে শুধু বিদেশিদের হত্যা করব।

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আয়াজ হোসেনকে চলে যেতে বললে সে তার সঙ্গে থাকা দুজন মেয়ে বন্ধুকেও ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু তাদের একজন ভারতীয় ও আরেকজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় এবং তাদের পরনে পশ্চিমা পোশাক থাকায় বন্দুকধারীরা ওই দুজনকে ছাড়তে রাজি হয়নি। দুই বন্ধুকে না ছাড়িয়ে নিজেও চলে আসতে অস্বীকার করে ফারাজ। পরের দিন সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযান শেষে ওই বেকারি থেকে যাদের লাশ বের করা হয়, সেখানে ফারাজের লাশও ছিল।

সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখতে বন্দুকধারীদের দারুণ আগ্রহ ছিল বলে দাবি সুমীরের। এক পর্যায়ে স্টাফদের বেকারির ওয়াইফাই সংযোগও চালু করতে বলে তারা। এমনকি জিম্মিদের মোবাইল ফোনের সাহায্যে নিহতদের রক্তাক্ত লাশের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করে বন্দুকধারীরা।

ভয়ঙ্কর সেই রাতের এক পর্যায়ে সুমীর বরাইসহ সাত আটজনকে বন্দুকধারীরা ওই ওয়াশরুমেই তালাবদ্ধ করে রাখে। সেসময়ই প্রথমবারের মতো সুমীর বাইরে থাকা তার আত্মীয়ের কাছে বাইরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে মেসেজ পাঠান। উত্তরে তার ওই আত্মীয় জানান, ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও কোনো অভিযান পরিচালনা করছে না।

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে নয়টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বরের আর্টিজান বেকারিতে ৮ থেকে ১০ জন সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা চালায়। এরপর ওই রেস্তোরাঁয় থাকা ২০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৩০-৩৫ জন লোকজনকে জিম্মি করে রাখে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গোলাগুলি হয়।

গোলাগুলিতে ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম এবং বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হয়েছেন। আহত হন প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য। নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন। আহতদের মধ্যে ১৯ জন গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

জঙ্গি হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এই ধরনের অতর্কিত হামলা চালিয়ে মানুষজনকে জিম্মি করার ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

শনিবার ভোরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। চালিয়ে জিম্মি হওয়া ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে এবং ২০ জন বিদেশি নাগরিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here