সেশনজট নিরসন ও ক্লাস পরীক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  সেশনজট নিরসন, নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা গ্রহণসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রোববার ক্যাম্পাসে নিজ বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. মোঃ হাবিবুল্লাহকে অবরুদ্ধও করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকদের অবহেলায় ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিভাগীয় প্রধান ড. হাবিবুল্লাহকে এ বিষয়ে বার বার বলার পরেও তিনি গুরুত্ব দেন না। নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা কোনো কিছুই হয় না। এ কারণে দীর্ঘ সেশনজটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। বাধ্য হয়েই তারা আন্দোলনে নেমেছেন। কর্তৃপক্ষ  সেশনজট দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড.হাবিবুল্লাহকে ব্যর্থতার দায়ে অব্যহতি প্রদানের দাবিতে বিভিন্ন  স্লোগান দেন।

ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম জানান, করোনা মহামারির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থবির হয়ে পড়েছিল। পরে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা দ্রুত ও অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করেন, পরীক্ষা নেন। কিন্তু আমাদের বিভাগে একই সাথে তিনটি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীর ব্যাচ থাকলেও সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই।

তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রাশেদ, মো. সামিউলসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, সেশনজট কাটাতে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে আমরা বার বার বিভাগীয় চেয়ারম্যান স্যারসহ শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু করছি, নেব, করে তারা বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন। তারা বিভাগে সময় না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তোষামোদিতেই বেশী ব্যস্ত থাকেন। আমাদের সাথে ভর্তি হওয়া অন্য বিভাগের বন্ধুরা অনার্স শেষ করে ফেলেছে। সেশনজটে আমাদের ভবিষ্যত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন শিক্ষকরা।

প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তাওহিদ বলেন, আমাদের বিভাগে প্রথম বর্ষে তিন ব্যাচ। এক বছরের বেশি পরীক্ষা হলেও স্যাররা রেজাল্ট দিচ্ছেন না। চেয়ারম্যান স্যার বিভাগে সময় না দিয়ে প্রশাসনের তোষামোদিতে ব্যস্ত থাকেন। ক্লাস-পরীক্ষায় তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি দিনরাত উপাচার্যের দপ্তরে পড়ে থাকেন।

আমরা সেশনজট দূর করতে চারদফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে- দুই মাসের মধ্যে ক্লাস শেষ করে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে হবে। উপস্থিতি, ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনে প্রাপ্ত নম্বর চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বেই প্রকাশ করতে হবে। পরীক্ষার এক মাসের মধ্যে ফলাফল দিতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের মৌখিক আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের অনুরোধ জানান বিভাগীয় প্রধান ড. মো. হাবিবুল্লাহ। এ সময় শিক্ষার্থীরা লিখিত সমাধানপত্র ও একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশের দাবি জানালে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. হাবিবুল্লাহর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক বড় বড় বিষয় থাকে। ছোটখাটো বিষয়ে সংবাদ না করাই ভালো। করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি যেহেতু তাদের অভিভাবক শিক্ষার্থীরা আমার কাছে দাবি জানাতেই পারে। এ বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here