897897897বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: ‘অন্ধ সন্ত্রাসী’ সেজে টাইমস স্কয়ারে হামলার পরিকল্পনা ছিল নিউ ইয়র্কে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আশিকুল আলমের।হামলার আগে ‘অন্ধ সন্ত্রাসী’ সাজার ইচ্ছা পোষণ করেছিল সে। আশিকুল চোখে লেজার চিকিৎসা করাতে চেয়েছিল যেন সেসময় চশমা পড়তে না হয়। মিডিয়া যেন তাকে ‘অন্ধ সন্ত্রাসী’ নাম না দিতে পারে বলে দায়েরকৃত অভিযোগে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে তার বিরুদ্ধে হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। আশিকুলের জামিন আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে আদালত। ফেডারেল কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ারে বন্দুক হামলা চালাতে পারে এমন অভিযোগে বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন তরুণ আশিকুল আলমকে আটক করে দেশটির পুলিশ। তাদের দাবি, বেশকিছুদিন ধরেই তাকে নজরদারিতে রেখেছিল গোয়েন্দারা। আশিকুলের বয়স ২২ বছর। জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা সে। তার যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড রয়েছে।

গ্রেফতারের একদিন পর শুক্রবার ব্রুকলিনের ইউ.এস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে আশিকুলকে হাজির করা হয়। আইনজীবী জেমস ডারো তার মক্কেলকে দুই লাখ ডলার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানান। অনুরোধ করেন, কারাগারে না রেখে তাকে গৃহবন্দি করে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য।

ডারো আরও জানান, আশিকুল তার মা-বাবার সঙ্গেই থাকেন এবং তারা বন্ডে স্বাক্ষর করার জন্য প্রস্তুত আছেন। তবে আদালতে সংক্ষিপ্ত শুনানির পর বিচারপতি চেরিল পোলাক আশিকুলকে জামিন না দিয়ে আটক রাখার নির্দেশ দেন। আগামী ২১ জুন সকাল ১১টায় আবারও তাকে আদালতে হাজির করা হবে।

শুক্রবার ব্রুকলিনের ফেডারেল আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুইটি গ্লক ১৯ আধা স্বয়ংক্রিয় পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে আশিকুলের কাছ থেকে। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১২ সালে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংক বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি তরুণ কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসকে স্টিং অপারেশনে গ্রেপ্তার করে এফবিআই। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী আশিকুল আলম কবে ও কখন গ্রেপ্তার হয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি এফবিআই। তবে স্থানীয় শুক্রবার আশিককে ব্রুকলিনের ফেডারেল কোর্টে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছে। বিচারক বলেছেন, এই মুহূর্তে আশিক বিপজ্জনক ব্যক্তি। তবে আদালতে আশিককে এখনো অভিযুক্ত করা হয়নি। পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ জুন।

আশিকের বাবার নাম মো. শাহজাহান। তার মায়ের নাম মুক্তা বেগম। বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের বহুল পরিচিত ‘সিংহ মার্কা বিল্ডিং’য়ে থাকতো আশিক। তাদের গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জে।

জানা যায়, শাহজাহান নিঃসন্তান। ১২ বছর আগে পুত্র পরিচয়ে আশিককে যুক্তরাষ্ট্রে আনেন তিনি। কিন্তু আশিকুলকে ওইসময় দত্তক নাকি সন্তান পরিচয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়েছে তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে শাহজাহান যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৯৮ সালে। তিনি পেশায় একজন রাস্তার দোকানি।

এক কর্মকর্তা জানান, আশিকুলকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছিলো। একজন গোয়েন্দা ছদ্মবেশে তাকে অনুসরণ করছিলেন। ওই গোয়েন্দার সঙ্গে কথাও হয়েছিল আশিকুলের। দুইজনের সাক্ষাতে সে (আশিকুল) নাইন ইলেভেন হামলাকে সমর্থন জানিয়েছিল। সম্ভাব্য হামলায় সুইসাইড ভেস্ট ও হাতবোমা ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করেছিলো সে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি রিচার্ড ডোনোঘুয়ে এক বিবৃতিতে জানান, ‘অভিযোগ অনুযায়ী, আশিকুল আলম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা ও টাইমস স্কয়ারে বেসামরিকদের ওপর হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অবৈধ অস্ত্র কিনেছিল।’ সে টাইমস স্কয়ার কিংবা এক মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাকে হত্যার জন্য ওয়াশিংটনে হামলার প্রস্তাব দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here